পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অদ্ভুত আগ্রহ ও কৌতুহল জন্মে গিয়েচে যে, তিনি যেখানেই থাকুন, আমি কাছে কাছে আদি সৰ্ব্বদাই- অথচ খুব নিকটে যাইনে! গুরুদেব মুখে মুখে ধর্মের কথা বলতে লাগলেন। আমি আর একটু এগিয়ে গেলাম ভাৱ ক’রে শোনবার জন্য । এ-সব কথা শুনতে আমার বড় ভাল লাগে । একবার কি একটা যোগ উপস্থিত-গঙ্গামানে মহাপুণ্য, সকল পাপ ক্ষয় হয়ে যাবে, স্নান করলেই মুক্তি। পাৰ্ব্বতী শিবকে বললেন-আচ্ছা প্ৰভু, আজ এই যে লক্ষ লক্ষ লোক কাশীত্বে স্নান করবে, সকলেই মুক্তি পাবে ? শিব বললেন, তা নয় পাৰ্বতী। চলে তোমায় দেখাব। দুজনে কাশীতে এলেন মণিকণিকার ঘাটে। শিব বৃদ্ধ ব্ৰাহ্মণের শব সেজে ঘাটের ধারে পড়ে রইলেন। পার্বতী তার স্ত্রী সেজে পাশে বসে কঁাদিতে লাগলেন। যারা এল, তাদের বললেন আমার বৃদ্ধ স্বামী মারা গিয়েচেন, এর সৎকার করার ব্যবস্থা আপনার করুন। কিন্তু একটা মুশকিল আছে, শব। যিনি স্পর্শ করবেন, তার সম্পূর্ণ নিষ্পাপ হওয়া চাই, নইলে শব স্পর্শেই মৃত্যু ঘটবে। এ-কথা শুনে সাহস ক’বে কেউ এগোয় না। সবাই ভাবে পাপ তো কতই করেচি প্ৰাণ দিতে যাবে কে ? সারাদিন কাটলে । সন্ধ্যা নামে-নামে। একজন চণ্ডাল ঘাটের ধারে অশ্রুমুখী ব্ৰাহ্মণপত্নীকে দেখে কি হয়েচে জিজ্ঞাসা করলে। পাৰ্বতী সকলকে যা ব’লে এসেচেৰু তাকেও তাঈ বললেন। চণ্ডাল শুনে ভেবে বললে-তার জন্য ভাবনা কি মা ? আজি গঙ্গা স্নান করলে তো নিষ্পাপ হবােই, এত বড যোগ যখন, এ জন্ম তো দূরের কথা শত জন্মের পাপ ক্ষয় হয়ে যাবে পাজিতে লিখেচে । তা দাড়ান, আমি ডুবটা দিয়ে আসি এবং একটু পরেই ডুব দিয়ে উঠে এসে বললে—ম ধরুন। ওদিক, আমি পায়ের দিকটা ধরচি-চলুন নিয়ে যাই শিব নিজমুত্তি ধারণ ক’রে চণ্ডালকে বর দিলেন। পাৰ্বতীকে বললেন-পাৰ্ব্বতী দেখলে । এই লক্ষ লক্ষ লোকের মধ্যে এই লোকটি মাত্র আজকার যোগের ফল লাভ করবে। মুক্তি যদি কেউ পায় এই চণ্ডালই পাবে। গল্পটা আমার ভারি ভাল লাগল। সে-দিনকার চৈতন্যচরিতামৃতে পডা সেই কথাটা মনে পড়ল-জ্যাঠাইমাকে বলেছিলাম, জ্যাঠাইমা বিশ্বাস করেন নি। ওঁদের শাস্ত্রের কথাতেই ও ত্ব বিশ্বাস নেই। অথচ মুখে হিন্দুয়ানি তো খুব দেখান। আর আমাকে, মাকে, সীতাকে, দাদাকে বলেন খিরিস্টান । আজকার গুরুদেবের এই গল্পটা কি জ্যাঠাইমা কাকৗমারা বুঝতে পারলেন ? চণ্ডালের ওপর আমার ভক্তি হ’ল। আমি যেন মনে মনে কাশী চলে গিয়েচি, আমি যেন মণিকর্ণিকার ঘাটে বুদ্ধ ব্ৰাহ্মণবেশী শিব ও ক্ৰন্দনরতা পাৰ্ব্বতীকে প্ৰত্যক্ষ করেচি । ও-বছর বড়দিনের সময় মিশনারী মেমোরা আমাদের রঙীন কার্ড দিয়েছিল, ছোট একখানা Kyr