পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

বুঝিল, তাহার সে উদ্দেশ্য বিফল হইয়াছে। আনারউন্নিসাকে মনে মনে আরাধ্য দেবীরূপে আরাধনা করিয়া তাহার রূপ চিন্তা করিয়াই যে তাহার সুখ। আনার উন্নিসাকে সুখী দেখিতে পাইলেই যে তাহার জীবনের সার্থকতা। কিন্তু নসীবে না থাকিলে সুখ দেয় কে? তাহা যদি না হইবে, তাহা হইলে আনার উন্নিসা আজ এত অসুখী কেন? নবাব সুজাবেগের পত্নীর এ মর্ম্মভেদী দীর্ঘশ্বাস কেন?

 কিয়ৎক্ষণ ধরিয়া কি ভাবিয়া মীর লতিফ উত্তেজিত কণ্ঠে বলিল, “আনার উন্নিসা! মনে পড়ে এক দিন আমি আমার দেহের শোণিত দিয়া, তোমার বিপন্ন জীবন রক্ষা করিয়াছিলাম! একদিন তোমাকে নদী তরঙ্গের করাল গ্রাস হইতে উদ্ধার করিয়াছিলাম। আজও তোমার স্বার্থের জন্য, তোমার হিতের জন্য—তোমার সুখের পথের কণ্টক এই বাহারবানুকে তোমার পথ হইতে সরাইবার জন্য—যাহা কিছু করা সম্ভব—তাহা আমি করিতে প্রস্তুত।”

 মীর লতিফ এই পর্য্যন্ত বলিয়াই থামিয়া গেল। আর আনার ঊন্নিসা বিস্মরবিহ্বল নেত্রে লতিফের সেই উত্তেজিত ক্রুদ্ধ মূর্ত্তি দেখিল। সে মনে মনে বড়ই ভয় পাইল। সে জানিত, এই মীর লতিফ চিরদিনই ঘোর নির্ব্বন্ধবান। তাহার কথার ভাবে সে বুঝিল, এখনও সে তাহার উপর সমানভাবে স্নেহশীল। আর এটুকুও বুঝিল, এই মীর লতিফ তাহার জন্য সবই করিতে পারে।

 তাহা হইলেও আনার উন্নিসা লতিফের কথার ভাবে, একটু ভয় পাইয়া তাহার হাতখানি ধরিয়া বলিল, — “তুমি কি বাহারকে হত্যা করিবে না কি?”

১৬৪