নতজানু হইয়া, আগন্তুকের চরণতলে বসিয়া পড়িয়া, যুক্ত করে অশ্রুপূর্ণনেত্রে, তাহার মুখের দিকে চাহিয়া বলিল “বড় অভাগিনী আমি। আমায় হত্যা করিও না। আমার জীবন ভিক্ষা দাও! এই বহুমূল্য হীরকহার, আর আমার যাহা কিছু অর্থ অলঙ্কার আছে—সবই তোমার। এ ভরা যৌবনে আমার অনেক সাধ! তাহার একটাও পূর্ণ হয় নাই। আমায় ছাড়িয়া দাও। আজ রাত্রেই আমি এই অভিশপ্ত আগরা হইতে চলিয়া যাইতেছি।”
আগন্তুক বলিল,—“না — না, কোন মার্জ্জনাই তোর জন্য নাই। তোর মত এক পাপিষ্ঠার জন্য, আমি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিতে চাহি না। আনার উন্নিসার সর্ব্বনাশ যে করিয়াছে, তাহার সর্ব্বনাশ আমি করিব।”
বাহারবানু তখন বুঝিল, এ হত্যাকারী দস্যু নয়,—তস্কর নয়,—অর্থ লোভে তাহার গৃহে প্রবেশ করে নাই। সে আসিয়াছে, আনারউন্নিসার পথের কণ্টক মুক্ত করিতে। আনার উন্নিসা নিজে যে প্রতিশোধ লইতে অসমর্থ, তাহা করিবার ভার দিয়াছে, এই নিষ্ঠুর প্রাণহীন আগন্তুকের উপর। বাহার তখন বিস্মিত চিত্তে বলিল,— “তাহা হইলে মরিবার পূর্ব্বে আমায় জানিতে দাও—কে তুমি?”
আগন্তুক সরোষে গর্জ্জন করিয়া বলিল,— “আমি মীর লতিফ! আনারের পিতার অন্নে পুষ্ট ক্রীতদাস আমি!”
বাহার বিদ্রূপ পূর্ণ স্বরে বলিল,— “ওঃ! তুমি মীর লতিফ! আনারউন্নিসার জার! লতিফ! কেন তুমি আমায় হত্যা করিবে?