পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

পারি নাই, কিন্তু তাঁর মরণে সে অবসর ঘটিয়াছে। এ সুযোগ ছাড়িব কেন? পিতা আমি—দেওয়ানা! সংসারের সহিত কোন সম্পর্কই আমার নাই। পিতা আমি—“দেওয়ানা।”

 ইহার পর জুমলা সাহেব তাঁহার কন্যাকে আর কোনরূপে বুঝাইবার চেষ্টা করেন নাই। মরুতাপবিদগ্ধ মলিন বনকুসুমের মত, দিনে দিনে শুখাইয়া, আনার উন্নিসা, এক দিন নিরাশাময় ভগ্নহৃদয়ে, স্বামীর পার্শ্বে চিরনিদ্রিতা হইল।

 এক দিন খুব মেঘ বৃষ্টি। চারিদিকে ঘোর অন্ধকার! মধ্যে মধ্যে দামিনী স্ফুরণ, সে অন্ধকারকে আরও ভীষণ করিয়া তুলিতেছে।

 এই দুর্য্যোগময়ী রজনীতে, এক ছিন্ন মলিনবাস পরিহিত যুবা পূরুষ, বৃষ্টি ধারাসিক্ত দেহে, আনার ও নবাব সুজাবেগের সমাধিপার্শ্বে আসিয়া দাঁড়াইল।

 তাহার হাতে এক রাশ ফুল। বিকট দৃষ্টিতে বহুক্ষণ সেই সমাধি দুটীর দিকে চাহিয়া থাকিয়া, সেই উন্মাদ, সেই শীতল সমাধির উপর সেই ফুলগুলি ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিয়া বলিল— “মৃত্যুই—শান্তি! মৃত্যুর পর—অবিচ্ছিন্ন প্রেম! আঃ! কি সুখ তোমাদের! জ্বালাময় জীব আমি, চিরদিন জ্বলিতেই আসিয়াছিলাম।”

 সে এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া বিকট হাস্যের সহিত আবার অন্ধকারে মিশাইল। সে— মীরলতিফ।

সমাপ্ত।

১৯২