পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

বেগ তাঁহার মনে কেমনতর একটা যন্ত্রণা অনুভব করিতে লাগিলেন। তাঁহার হৃদয়টা যেন একাবারে শূন্য হইয়া পড়িল। বর্ষার মেঘের মত, চিত্ত সর্ব্বদাই যেন ঘোর বিষণ্নতায় সমাচ্ছন্ন। সেই চন্দ্রালোকিত নিশীথে, প্রকৃতি অনন্ত সৌন্দর্য্য বিভূষিতা হইয়া হাসিতেছিল, কিন্তু তাঁহার চক্ষে তাহা বড়ই তিক্ত বলিয়া বোধ হইতেছিল।

 সেরাজির আধার সম্মুখেই ছিল। সুজা বেগ—চিত্তের অশান্তি দূর করিবার জন্য, আর এক পাত্র পান করিলেন। তার পর চারিদিকে চাহিয়া, এক গোপনীয় স্থান হইতে আনারের সেই তস‍্বীর খানি বাহির করিয়া, সন্মুখবর্ত্তী আলোকে পূর্ব্বদিনের মত সতৃষ্ণনেত্রে দেখিতে লাগিলেন। তাঁহার বিরস চিত্তটার মধ্য হইতে, পূর্ব্বের সেই অবসন্নভাবটা যেন একটু সরিয়া গেল।

 সুজা বেগে, সেই চিত্রখানি কিয়ৎক্ষণ মনোযোগের সহিত দেখিয়া অস্ফূটস্বরে বলিলেন—“শান্তির আশায়, সুখের আশায়, এ দুনিয়ায় পাপ পাথারে মগ্ন হইয়াছি, কিন্তু সুখ ও শান্তি পাইয়াছি কি? পাইয়াছি—কেবল আশার বদলে—নিরাশা, সুখের পরিবর্ত্তে—দুঃখ, আনন্দের বিনিময়ে—বিষাদ! আনারউন্নিসা! কি সুন্দর রূপ বিধাতা তোমাকে দিয়াছেন? খালি কি রূপ? শুনিয়াছি, গুণও ত তোমার কম নয়! তোমার সঙ্গে সেই উৎসব রাত্রে যতটুকু ছিলাম, বোধ হইতেছিল যেন স্বর্গ সুখ ভোগ করিতেছি। কি সুমিষ্ট কথা! কি বীণানিন্দিত স্বর!

৫০