পাতা:দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন (র‍্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট সংস্করণ).djvu/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বালি দেখিতে দেখিতে ট্রেন অতি ধীরে ধীরে “ঝন ঝন ঝনাৎ” “ঝন ঝন ঝনাৎ" শব্দে চলিতে লাগিল । দেবগণ চাহিয়া দেখেন-চতুর্দিকে অসংখ্য রেল রাস্তা। কোন রেল দিয়া একখানি মাল বোঝাই গাড়ী আসিয়া থামিল । কোন রেল দিয়া একখানি গাড়ী আরোহী লইয়া রওনা হুইবার উদেযাগ করিতেছে । কোন রেল দিয়া একজন কলচালক বংশীধ্বনি করিতে করিতে একখানি ইঞ্জিন লইয়া ছুটিয়া যাইতেছে। কোন রেলে কতকগুলা গাড়ী থামিয়া বুহিয়াছে । কোন স্থানে ভাঙ্গণ গাড়ী মেরামত হইতেছে। কোন স্থানে গাড়ীতে রং মাখাইতেছে। স্থানটা ধূমে অন্ধকার। বরুণ কহিলেন *এই হাবড়ায় ট্রেন আসিল " "হাবড়ার পর পারেই কলিকাতা ।” এই সময় ট্রেন “কঁ্য কোচ ঝনাং” শব্দে প্লাটফরমে থামিল । উপ তাড়াতাড়ি দ্বার খুলিতে যাইয়া দেখে দ্বারে চাবি বন্ধ। দেবগণ সেই রুদ্ধ কামরায় কয়েদী অবস্থায় বসিয়া ষ্টেশন দেখিতে লাগিলেন। দেখেন—ষ্টেশনে ধুমধামের সীমা পরিসীমা নাই। অসংখ্য সাহেব, মেম, বাঙ্গালী বাবু প্লাটফরমে বেড়াইতেছে। কুলির দুই ঠ্যাং বিশিষ্ট দুই চাকার গাড়ীতে আরোহীদিগের বাক্স প্যাটুর বোঝাই করিয়া ঘড়, ঘড়, শব্দে এক প্রাস্ত হইতে অপর প্রাস্তে টানিয়া লইয়া গিয়া দুম দাম শব্দে আছড়াইয়া ফেলিতেছে ; চতুর্দিক হইতে “চাই পান” “চাই জলখাবার” শব্দ হইতেছে । মেথরের ঝাটা বগলে ছুটাছুটি আরম্ভ করিয়াছে। কুঁজ হস্তে মুসলমানের জল দিতে বাহির হইয়াছে। তাহারা গাড়ীর অপর কামরার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া দেখেন—আরোহীরা নিজ নিজ তল্পী তল্লা গুছাইয়া নামিবার জন্ত প্রতীক্ষা করিতেছে। তাহদের কাহারও দুই তিন দিন স্নান আহার না হওয়ায় এক অপূৰ্ব্ব ঐ বাহির হইয়াছে, তাহার উপর আবার পাথুরে কয়লার গুড়া লাগিয়া বস্ত্র মলিন হওয়ায় যেন প্ৰেতঘাটার ফেরত বোধ হুইতেছে। এই সময় শ্ৰীকৃষ্ণের অমুপস্থিতিতে তদভ্রাতা বলভদ্রের ন্যায় একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ আসিয়া আরোহীদিগকে মুক্ত করিবার জন্য “খটাস খটাস" শব্দে গাড়ীর স্বার খুলিয়া দিল । তখন কারাগার হইতে উদ্ধার হইয়া অসংখ্য ইংরাজ, বাঙ্গালী, মুসলমান, য়িহদী, কাবুলী যাত্রী গেট অভিমুখে চলিল। দেবগণ কাবুলী যাত্রীর পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন । নারায়ণ কহিলেন “চালাক বটে ইহাৱা ! নিজে মাশুল দিয়ে এসেছে—কিন্তু পৃষ্ঠে করিয়া এক একটা বিরাশী মণ বোঝাই আমি আনিয়াছে।” এই সময় ষ্টেশনে অসংখ্য বস্তা সাজান দেখিয়া ●