কি?
সব কথা খুলে বল্ না বোন! আমি কিছুই বুঝতে পারলুম না।
পার্ব্বতী কহিল, যা বলবার সবই তো বললুম।
কিন্তু কিছুই যে বোঝা গেল না রে!
যাবেও না। বলিয়া পার্ব্বতী আর-একদিকে মুখ ফিরাইয়া রহিল।
মনোরমা ভাবিল, পার্ব্বতী কথা লুকাইতেছে,—তাহার মনের কথা কহিবার ইচ্ছা নাই। বড় অভিমান হইল; দুঃখিত হইয়া কহিল, পারু, তোর যাতে দুঃখ, আমারও তো তাতে তাই বোন। তুই সুখী হ, এই তো আমার আন্তরিক প্রার্থনা। যদি কিছু তোর লুকোন কথা থাকে, আমাকে বলতে না চাস্, বলিস নে। কিন্তু এমন করে আমাকে তামাশা করিস নে।
পার্ব্বতীও দুঃখিতা হইল, কহিল, ঠাট্টা করিনি দিদি। যতদূর নিজে জানি, ততদূর তোমাকেও বলেচি। আমি জানি, আমার স্বামীর নাম দেবদাস; বয়স উনিশ-কুড়ি—সেই কথাই তো তোমাকে বলেচি।
কিন্তু এই যে শুনলুম, তোর আর-কোথায় সম্বন্ধ স্থির হয়েচে!
স্থির আর কি! ঠাকুরমার সঙ্গে তো আর বিয়ে হবে না, হলে আমারই সঙ্গে হবে; আমি তো কৈ এ খবর শুনিনি!
মনোরমা যাহা শুনিয়াছিল, তাহা এখন বলিতে গেল। পার্ব্বতী তাহাতে বাধা দিয়া বলিল, ও-সব শুনেচি।
তবে? দেবদাস তোকে—
কি আমাকে?
মনোরমা হাসি চাপিয়া বলিল, তবে স্বয়ম্বরা বুঝি? লুকিয়ে লুকিয়ে পাকা বন্দোবস্ত করা হয়ে গেছে?
কাঁচা-পাকা এখনও কিছুই হয়নি।
মনোরমা ব্যথিত-স্বরে কহিল, তুই কি বলিস পারু, কিছুই তো বুঝতে পারিনে।
পার্ব্বতী কহিল, তা হলে দেবদাসকে জিজ্ঞাসা করে তোমায় বুঝিয়ে দেব।
কি জিজ্ঞাসা করবে? সে বিয়ে করবে কি না, তাই?