তৃতীয় খণ্ড-চতুর্থ পরিচ্ছেদ S eసి ব্ৰজেশ্বর শিহরিল—মাথায় করাঘাত করিল। বলিল, “তিনিই কি গোইন্দা ?” প্রফুল্ল চুপ করিয়া রহিল । ব্রজেশ্বরের বুঝিতে কিছু বাকি রহিল না। এখানে আজিকার রাত্রে যে দেৰী চৌধুরাণীর সাক্ষাৎ পাওয়া যাইবে, এ কথা হরবল্লভ ব্রজেশ্বরের কাছে শুনিয়াছিলেন। ব্ৰজেশ্বর আর কাহারও কাছে এ কথা বলেন নাই ; দেবীরও যে গৃঢ় মন্ত্রণ, আর কাহারও জানিবার সম্ভাবনা নাই । বিশেষ দেবী এ ঘাটে আসিবার আগেই কোম্পানির সিপাহী রঙ্গপুর হইতে যাত্রা করিয়াছিল, সন্দেহ নাই ; নহিলে ইহারই মধ্যে পৌছিত না। আর ইতিপূর্বেই হরবল্লভ কোথায় যাইতেছেন, কাহারও কাছে প্রকাশ না করিয়া দূরযাত্র করিয়াছেন, আজও ফেরেন নাই। কথাটা বুঝিতে দেরি হইল না । তাই হরবল্লভ টাকা পবিশোধের কোন উদ্যোগ করেন নাই। তথাপি ব্ৰজেশ্বর ভুলিলেন না যে, “পিতা ধৰ্ম্মঃ পিতা স্বৰ্গ: পিতাহি পরমস্তপ: | পিতরি প্রীতিমাপম্নে প্রীয়স্তুে সৰ্ব্বদেবতা: ॥” ব্ৰজেশ্বর প্রফুল্লকে বলিলেন, “আমি মরি কোন ক্ষতি নাই। তুমি মরিলে, আমার মরার অধিক হইবে, কিন্তু আমি দেখিতে আসিব না । তোমার আত্মরক্ষার আগে, আমার ছার প্রাণ রাখিবার আগে, আমার পিতাকে রক্ষা করিতে হইবে।” প্র । সেজন্ত চিন্তা নাই। আমার রক্ষা হইবে না, অতএব তার কোন ভয় নাই । তিনি তোমায় রক্ষা করিলে করিতে পারিবেন । তবে ইহাও তোমার মনস্তুষ্টির জন্য আমি স্বীকার করিতেছি যে, তার অমঙ্গল সম্ভাবনা থাকিতে, আমি আত্মরক্ষার কোন উপায় করিব না। তুমি বলিলেও করিতাম না, না বলিলেও করিতাম না। তুমি নিশ্চিন্তু থাকিও। এই কথা দেবী আস্তরিক বলিয়াছিল। হরবল্লভ প্রফুল্লের সর্বনাশ করিয়াছিল, হরবল্লভ এখন দেবীর সর্বনাশ করিতে নিযুক্ত। তবু দেবী তার মঙ্গলাকাঙ্ক্ষিণী । কেন না, প্রফুল্ল নিষ্কাম । যার ধৰ্ম্ম নিষ্কাম, সে কার মঙ্গল খুজিলাম, তত্ত্ব রাখে না। মঙ্গল হইলেই হইল । কিন্তু এ সময়ে তীরবর্তী অরণ্যমধ্য হইতে গভীর তুর্য্যধ্বনি হইল। দুই জনেই চমকিয়া छेठेिल । চতুর্থ পরিচ্ছেদ দেবী ডাকিল, “নিশি !” নিশি ছাদের উপর আসিল ।
পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।