झुश्किो ( সম্পাদকীয় ) ইতিহাসের দিক্ দিয়া দেবী চৌধুরাণী সম্বন্ধে যাহা কিছু জ্ঞাতব্য, সার ঐযন্ত্রনাথ সরকার তাহার ভূমিকায় তাহা লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। প্রফুল্ল-চরিত্রে যে নারীজীবনের পূর্ণ বিকাশ প্রদর্শিত হইয়াছে, ‘সীতারামের স্ত্রী ও ‘আনন্দমঠের শাস্তির সহিত তুলনামূলক আলোচনা করিয়া তিনি তাহাও দেখাইয়াছেন। ১৮৭৮ খ্ৰীষ্টাব্দের আগস্ট মাসে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কৃষ্ণকান্তের উইল প্রকাশিত হয়। ইহার কিছু কাল পরে একটি পারিবারিক দুর্ঘটনায় তাহার জীবনে বিশেষ পরিবর্তন উপস্থিত হয় ; নিছক শিল্পস্থষ্টির জন্য গল্প রচনা হইতে তিনি বিরত হন। এখন হইতে ১৮৪২ খ্ৰীষ্টাব্দের মধ্যে তিনি ‘রাজসিংহ নামে একটি “ক্ষুদ্র কথা” মাত্র লিখিয়াছিলেন। ১৮৯৩ খ্ৰীষ্টাব্দে অর্থাৎ মৃত্যুর অব্যবহিত পূৰ্ব্বে বঙ্কিমচন্দ্র রাজসিংহকে বর্তমান বৃহৎ রূপ দিয়াছিলেন। ১৮৮২ হইতে ১৮৯৪ খ্ৰীষ্টাব্দে মৃত্যু পৰ্য্যন্ত তিনি মাত্র তিনখানি উপন্যাস রচনা করিয়াছিলেন। এই উপন্যাস তিনখানি (‘আনন্দমঠ–১৮৮২ ; দেবী চৌধুরাণী—১৮৮৪ সীতারাম—১৮৮৭) তাহার পূৰ্ব্বেকার সকল গল্প উপন্যাস হইতে স্বতন্ত্র, একটা বিশেষ উদ্দেশ্য লইয়া লিখিত। যে 'অনুশীলনতত্ত্ব লইয়া তিনি শেষজীবনে অবিরত মাথা ঘামাইতেন, উপন্যাসচ্ছলে তাহারই সহজ প্রচারের জন্য তিনি এই তিনটি উপন্যাসের আয়োজন করিয়াছিলেন। তিনি নিজেই এগুলিকে 'অনুশীলনতত্ত্ব প্রচারের একটা “কল” বলিয়া গিয়াছেন। এই তিনখানি উপন্যাস বঙ্কিমচন্দ্রের “ত্রয়ী” নামে প্রসিদ্ধ ! স্মরণ রাখিতে হইবে, পাদরি হেস্টির সহিত স্টেটস্ম্যানে বঙ্কিমচন্দ্রের হিন্দুধৰ্ম্মসংক্রান্ত তর্কযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই দেবী চৌধুরাণী রচনার সূত্রপাত হয়। অমুশীলনধৰ্ম্ম সম্বন্ধে তাহার বক্তব্যকে দৃষ্টান্তসহযোগে সুপরিস্ফুট করিয়া তুলিবার এই সুযোগ বঙ্কিমচন্দ্র পরিত্যাগ করেন নাই। বঙ্কিমচন্দ্রের "ত্রয়ী” লইয়া এখন পৰ্য্যন্ত যত আলোচনা হইয়াছে, তন্মধ্যে স্বৰ্গীয় বিপিনচন্দ্র পাল এবং পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের আলোচনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিপিনচন্দ্রের আলোচনা নানা সাময়িক পত্রিকার পৃষ্ঠায় ছড়াইয়া আছে। তন্মধ্যে অধুনালুপ্ত নারায়ণ ও বঙ্গবাণী'র নাম করা যাইতে পারে। পাঁচকড়িবাবুর বঙ্কিমচন্দ্রের ত্রয়ী প্রবন্ধ
পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।