পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় খণ্ড-একাদশ পরিচ্ছেদ 2 Φά নিশি অপ্রতিভ হইল, মনে মনে স্বীকার করিল, ব্রজেশ্বর পুরুষ বটে। কেবল লাঠি বাজিতে পুরুষ হয় না, নিশি তা বুঝিল। বলিল, “এখন উপায় ?” ব্র । উপায় আছে। চল, প্রফুল্পকে লইয়া ঘরে যাই। সেখানে গিয়া বাপকে সকল কথা ভাঙ্গিয়া বলিব। লুকাচুরি হইবে না। নিশি। তা হইলে তোমার বাপ কি দেবী চৌধুরাণীকে বাড়ীতে উঠিতে দিবেন ? দেবী বলিল, “দেবী চৌধুরাণী কে ? দেবী চৌধুরাণী মরিয়াছে, তার নাম এ পৃথিবীতে মুখেও আনিও না। প্রফুল্পের কথা বল।” নিশি। প্রফুল্লকেই কি তিনি ঘরে স্থান দিবেন ? ত্র । আমি ত বলিয়াছি যে, সে ভার আমার । প্রফুল্ল সন্তুষ্ট হইল। বুৰিয়াছিল যে, ব্রজেশ্বরের ভার বহিবার ক্ষমতা না থাকিলে, সে ভার লইবার লোক নহে । একাদশ পরিচ্ছেদ তখন ভূতনাথে যাইবার উদ্যোগ আরম্ভ হইল। রঙ্গরাজকে সেইখান হইতে বিদায় . দিবার কথা স্থির হইল। কেন না, ব্রজেশ্বরের দ্বারবানেরা এক দিন তাহার লাঠি খাইয়াছিল, যদি দেখিতে পায়, তবে চিনিবে । রঙ্গরাজকে ডাকিয়া সকল কথা বুঝাইয়া দেওয়া হইল, কতক নিশি বুঝাইল, কতক প্রফুল্ল নিজে বুঝাইল । রঙ্গরাজ কাদিল —বলিল, “ম, আমাদিগকে ত্যাগ করিবেন, তা ত কখনও জানিতাম না।” সকলে মিলিয়া রঙ্গরাজকে সান্থনা করিল। দেবীগড়ে প্রফুল্লের ঘর বাড়ী, দেবসেবা, দেবত্র সম্পত্তি ছিল। সে সকল প্রফুল্ল রঙ্গরাজকে দিলেন, বলিলেন, “সেইখানে গিয়া বাস কর । দেবতার ভোগ হয়, প্রসাদ খাইয়া দিনপাত করিও । আর কখনও লাঠি ধরিও না । তোমরা যাকে পরোপকার বল, সে বস্তুতঃ পরপীড়ন । ঠেঙ্গ লাঠির দ্বারা পরোপকার হয় না। দুষ্টের দমন রাজা না করেন, ঈশ্বর করিবেন—তুমি আমি কে ? শিষ্টের পালনের ভার লইও–কিন্তু তুষ্টের দমনের ভার ঈশ্বরের উপর রাখিও। এই সকল কথাগুলি আমার পক্ষ হইতে ভবানী ঠাকুরকেও বলিও , তাকে আমার কোটি কোটি প্রণাম জানাইও।” ' ' রঙ্গরাজ কাদিত্তে কাদিতে বিদায় হইল। দিবা ও নিশি সঙ্গে সঙ্গে ভূতনাথের ঘাট পৰ্য্যস্ত চলিল। সেই বজরায় ফিরিয়া তাহারা দেবীগড়ে গিয়া বাস করিবে, প্রসাদ খাইবে আর १९ *