পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

} તો તાત્તિ پۀ ؤ হরিনাম করিবে। বজরায় দেবীর রাণীগিরির আসবাব সব ছিল, পাঠক দেখিয়াছেন। তাহার মূল্য অনেক টাকা। প্রফুল্ল সব দিবা ও নিশিকে দিলেন। বলিলেন, “এ সকল বেচিয়া যাহা হইবে, তাহার মধ্যে তোমাদের যাহা প্রয়োজন, ব্যয় করিবে। বাকী দরিদ্রকে দিবে। এ সকল আমার কিছুই নয়—আমি ইহার কিছুই লইব না।” এই বলিয়া প্রফুল্ল আপনার বহুমূল্য বস্ত্ৰালঙ্কারগুলি নিশি ও দিবাকে দিলেন। নিশি বলিল, “মা ! নিরাভরণে শ্বশুরবাড়ী উঠিবে ?” প্রফুল্ল ব্রজেশ্বরকে দেখাইয়া দিয়া বলিল, “স্ত্রীলোকের এই আভরণ সকলের ভাল। আর আভরণে কাজ কি, মা ?” নিশি বলিল, “আজ তুমি প্রথম শ্বশুরবাড়ী যাইতেছ ; আমি আজ তোমাকে কিছু যৌতুক দিয়া আশীৰ্ব্বাদ করিব। তুমি মানা করিও না, এই আমার শেষের সাধ—সাধ মিটাইতে দাও।” - এই বলিয়া নিশি কতকগুলি বহুমূল্য রত্নালঙ্কারে প্রফুল্লকে সাজাইতে লাগিল। পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে, নিশি যখন এক রাজমহিষীর কাছে থাকিত, রাজমহিষী তাহাকে অনেক অলঙ্কার দিয়াছিলেন। এ সেই গহনা। দেবী তাহাকে নূতন গহনা দিয়াছিলেন বলিয়া সেগুলি নিশি পরিত না। এক্ষণে দেবীকে নিরাভরণা দেখিয়া সেইগুলি পরাইল। তার পর আর কোন কাজ নাই, কাজেই তিন জনে কাদিতে বসিল। নিশি গহনা পরাইবার সময়েই সুর তুলিয়াছিল ; দিবা তৎক্ষণাৎ পো, ধরিলেন। তার পর পো সানাই ছাপাইয়া উঠিল। প্রফুল্পও কাদিল—না কঁাদিবার কথা কি ? তিন জনের আন্তরিক ভালবাসা ছিল ; কিন্তু প্রফুল্পের মন আহলাদে ভর, কাজেই প্রফুল্ল অনেক নরম গেল। নিশিও দেখিল যে, প্রফুল্লের মন মুখে ভরা ; নিশিও সে সুখে মুখী হইল, কান্নায় সেও একটু নরম গেল। সে বিষয়ে যাহার যে ক্রটি হইল, দিবা ঠাকুরাণী তাহা সারিয়া লইলেন। যথাকালে বজরা ভূতনাথের ঘাটে পৌঁছিল। সেইখানে দিবা ও নিশির পায়ের ধূলা লইয়া, প্রফুল্ল তাহাদিগের কাছে বিদায় লইল । তাহার কাদিতে কঁাদিতে সেই বজরায় ফিরিয়া যথাকালে দেবীগড়ে পৌঁছিল। দাড়ি মাঝি বরকন্দাজের বেতন হিসাব করিয়া দিয়া, তাহাদের জবাব দিল বজরাখানি রাখা অকৰ্ত্তব্য—চেনা বজরা। প্রফুল্ল বলিয়া দিয়াছিল, “উহ রাখিও না।” নিশি বজরাখানাকে চেলা করিয়া দুই বৎসর ধরিয়া পোড়াইল । এই চেলা কাঠের উপটৌকন দিয়া পাঠক মহাশয় নিশি ঠাকুরাশীর কাছে বিদায় লউন। অনুপযুক্ত হইবে না।