প্রথম খণ্ড—দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ a মা চুপ করিয়া কাদিতে লাগিল। প্রফুল্ল বলিল, “তোমাকে এক রাখিয়া আমি যাইতে চাহিতাম না—কিন্তু আমার দুঃখ ঘুচিলে তোমারও দুঃখ কমিবে, এই ভরসায় যাইতে চাহিতেছি।” মাতে মেয়েতে অনেক কথাবাৰ্ত্ত হইল। মা বুঝিল যে, মেয়ের পরামর্শই ঠিক । তখন মা, যে কয়টি চাউল ছিল, তাহ রাধিল । কিন্তু প্রফুল্ল কিছুতেই খাইল না। কাজেই তাহার মাতাও খাইল না। তখন প্রফুল্ল বলিল, “তবে আর বেলা কাটাইয়া কি হইবে ? অনেক পথ ।” - তাহার মাতা বলিল, “আয় তোর চুলটা বাধিয়া দিই।” প্রফুল্ল বলিল, “ন, থাক।” মা ভাবিল, “থাক্। আমার মেয়েকে সাজাইতে হয় না।” মেয়ে ভাবিল, “থাক। সেজে গুজে কি ভুলাইতে যাইব ? ছি!” তখন দুই জনে মলিন বেশে গৃহ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ বরেন্দ্রভূমে ভূতনাথ নামে গ্রাম ; সেইখানে প্রফুল্লমুখীর শ্বশুরালয়। প্রফুল্লের দশ যেমন হউক, তাহার শ্বশুর হরবল্লভবাবু খুব বড়মানুষ লোক । তাহার অনেক জমিদারী আছে, দোতালা বৈঠকখানা, ঠাকুববাড়ী, নাটমন্দির, দপ্তরখান, খিড়কিতে বাগান, পুকুর প্রাচীরে বেড়া। সে স্থান প্রফুল্লমুখীর পিত্রালয় হইতে ছয় ক্রোশ । ছয় ক্রোশ পথ হাটিয়া মাতা ও কন্যা অনশনে বেলা তৃতীয় প্রহরের সময়ে সে ধনীর গৃহে প্রবেশ করিলেন। প্রবেশকালে প্রফুল্লের মার পা উঠে না। প্রফুল্ল কাঙ্গালের মেয়ে বলিয়া যে হরবল্লভবাবু র্তাহাকে ঘৃণা করিতেন, তাহা নহে। বিবাহের পরে একটা গোল হইয়াছিল। হরবল্লভ কাঙ্গাল দেখিয়াও ছেলের বিবাহ দিয়াছিলেন । মেয়েটি পরমসুন্দরী, তেমন মেয়ে আর কোথাও পাইলেন না, তাই সেখানে বিবাহ দিয়াছিলেন। এদিকে প্রফুল্লের মা, কন্যা বড়মানুষের ঘরে পড়িল, এই উৎসাহে সৰ্ব্বস্ব ব্যয় করিয়া বিবাহ দিয়াছিলেন। সেই বিবাহতেই—তার যাহা কিছু ছিল, ভস্ম হইয়া গেল। সেই অবধি এই অল্পের কাঙ্গাল । কিন্তু অদৃষ্টক্রমে সে সাধের বিবাহে বিপরীত ফল ফলিল। সৰ্ব্বস্ব ব্যয় করিয়াও—সৰ্ব্বস্বই তার কত টাকা —সৰ্ব্বস্ব ব্যয় করিয়াও সে বিধবা স্ত্রীলোক সকল দিক্ কুলান করিতে 8
পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।