ভূমিকা [ শ্ৰীযন্ত্রণাথ সরকার । 'দেবী চৌধুরাণী প্রকাশের সময় বঙ্কিমচন্দ্র নিজেই আমাদের জানাইয়াছেন— “ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা আমার উদ্দেশ্ব ছিল না, সুতরাং ঐতিহাসিকতার ভাণ করি নাই ...দেবী চৌধুরাণীরও ঐরূপ [ অর্থাৎ ‘আনন্দমঠের মত ] একটু ঐতিহাসিক মূল আছে।“ দেবী চৌধুরাণী গ্রন্থের সঙ্গে ঐতিহাসিক দেবী চৌধুরাণীর সম্বন্ধ বড় অল্প। দেবী চৌধুরাণী, ভবানী পাঠক, গুড্ল্যাড় সাহেব, লেফটেনাণ্ট বেনান এই নামগুলি ঐতিহাসিক ।...দেবী চৌধুরাণীকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বিবেচনা না করিলে বড় বাধিত হইব।” এ কথা সত্য । নাম ও তারিখ ধরিয়া দেখিতে গেলে এই উপন্যাসে ইতিহাসকে মানিয়া চলা হয় নাই। প্রকৃত ভবানী পাঠক এক জন ভোজপুরী অর্থাৎ আরা জেলার বিহারী ব্রাহ্মণ । তাহার সহযোগী এবং ততোধিক বড় ডাকাতের সর্দার মজমুন সাহ, মেওয়াতী অর্থাৎ বর্তমান আলোয়াল রাজ্যের লোক ; বাঙ্গলায় তাহার জন্ম হয় নাই, এবং মৃত্যুর পর তাহার দেহ বাঙ্গল হইতে সেই সুদূর মেওয়াতে কবর দিবার জন্য পাঠান হয়, বাঙ্গলার হেয় জমিতে নহে। তাহাদের অনুচরগণ রাজপুত, কেহই বাঙ্গালী নহে— “Not a Bengal(i) rable, but a number of well-armed Rajput.” (S*** এবং ১৭৮৭ সনের সরকারী রিপোর্ট )। ভবানী পাঠক ১৭৮৭ সনের জুলাই মাসে ইংরেজ সিপাইদের সঙ্গে যুদ্ধে মারা যায়, স্ব-ইচ্ছায় ধরা দিয়া দ্বীপান্তরে যাইবার পর নহে (আর, তখন আন্দামানে কয়েদী পাঠান প্রথা আরম্ভ হয় নাই ) । ফলতঃ ওয়ারেন হেষ্টিংস পদত্যাগ করিবার কয়েক বৎসর পরে এই সব ডাকাতদের দমন হয় এবং “দেবী”ও অদৃশ্য হন। দেবী চৌধুরাণী নিজ দল ভাঙ্গিবার কয়েক বৎসর আগে গুড়ল্যাড় রঙ্গপুর ছাড়েন। কিন্তু যে চিত্রপটের সামনে এই গ্রস্থের ঘটনাবলী অভিনীত হইয়াছে, অর্থাৎ ইহার সামাজিক আবহাওয়া, একেবারে সত্য। খাটি বাঙ্গালীরাও ডাকাতি করিত । চলনবিলের ধারে একটি গ্রামের এক বিখ্যাত বারেন্দ্র লাহ্মণ-বন্শের পুরুষের নৌকাযোগে ডাকাতি করিতে করিতে যে নিজের নূতন জামাইকে হত্যা করেন এবং তাহার অনুতাপে ঐ পাপ-ব্যবসায় ছাড়িয়া দেন, তাহার কথা রাজশাহী-পাবনা জেলায় লোক-প্রসিদ্ধ । আর, হেষ্টিংস লাট হইবার পর (১৭৭২ ) এ দেশের দশা যেরূপ ছিল, বঙ্কিম তাহার অক্ষরে অক্ষরে সত্য বর্ণনা করিয়াছেন । বঙ্কিম মহাপণ্ডিত ছিলেন, বহু বিভিন্ন বিষয়ে
পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।