পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম পরিচ্ছেদ এদিকে কৰ্ত্ত মহাশয় এক প্রহর রাত্রে গৃহমধ্যে ভোজনার্থ আসিলেন। গৃহিণী ব্যজনহস্তে ভোজন-পাত্রের নিকট শোভমানী—ভাতে মাছি নাই—তবু নারীধর্মের পালনার্থ • মাছি তাড়াইতে হইবে। হায়! কোন পাপিষ্ঠ নরাধমেরা এ পরম রমণীয় ধৰ্ম্ম লোপ করিতেছে ? গৃহিণীর পাঁচ জন দাসী আছে—কিন্তু স্বামিসেবা--আর কার সাধ্য করিতে আসে ! যে পাপিষ্ঠেরা এ ধৰ্ম্মের লোপ করিতেছে, হে আকাশ ! তাহদের মাথার জন্য কি তোমার বজ্র নাই ? - কৰ্ত্ত আহার করিতে করিতে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাগদী বেটী গিয়াছে কি ?” গৃহিণী মাছি তাড়াইয়া নথ নাড়িয়া বলিলেন, “রাত্রে আবার সে কোথা যাবে ? রাত্রে একটা অতিথ এলে তুমি তাড়াও না—আর আমি বেটোকে রাত্রে তাড়িয়ে দেব ?” কৰ্ত্তা। অতিথ হয়, অতিথশালায় যাক না ? এখানে কেন ? গিল্পী। আমি তাড়াতে পারব না, আমি ত বলেছি। তাড়াতে হয়, তুমি তাড়াও । বড় সুন্দর বে। কিন্তু— কৰ্ত্তা। বাগদীর ঘরে অমন ফুটে একটা সুন্দর হয় । তা আমি তাড়াচ্চি। ব্রজকে ডাক্ ত রে। 岑 ব্রজ, কৰ্ত্তার ছেলের নাম । এক জন চাকরাণী ব্রজেশ্বরকে ডাকিয়া আনিল । ব্ৰজশ্বরের বয়স একুশ বাইশ ; অনিন্দ্যসুন্দর পুরুষ,—পিতার কাছে বিনীত ভাবে আসিয়া দাড়াইল— কথা কহিতে সাহস নাই । দেখিয়া হরবল্লভ বলিলেন, “বাপু, তোমার তিন সংসার মনে আছে ?” ব্রজ চুপ করিয়া রহিল। “প্রথম বিবাহ-মনে হয়—সে একটা বাগদীর মেয়ে ?” - ব্ৰজ নীরব—বাপের সাক্ষাতে বাইশ বছরের ছেলে—হীরার ধার হইলেও সেকালে কথা কহিত না—এখন যত বড় মূৰ্খ ছেলে, তত বড় লম্বা স্পীচু ঝাড়ে। কর্তা বলিতে লাগিলেন, “সে বাগদী বেটী—আজ এখানে এসেছে—জোর করে থাকবে, তা তোমার গর্ভধারিণীকে বললেম যে, বাট মেরে তাড়াও । মেয়েমানুষ মেয়েমানুষের গায়ে হাত কি দিতে পারে? এ তোমার কাজ । তোমারই অধিকার—আর কেহ স্পর্শ করিতে পারে না। তুমি আজ রাত্রে তাকে বাট মেরে তাড়াইয়া দিবে। নহিলে আমার ঘুম হইবে না।”