প্রথম খণ্ড—পঞ্চম পরিচ্ছেদ b) y গিল্পী বলিলেন, “ছি! বাবা, মেয়েমানুষের গায়ে হাত তুল না। ওঁর কথা রাখিতেই হইবে, আমার কথা কিছু চলবে না ? তা যা কর, ভাল কথায় বিদায় করিও।” ব্ৰজ বাপের কথায় উত্তর দিল, “যে আজ্ঞা ।” মার কথায় উত্তর দিল, “ভাল ” এই বলিয়া ব্ৰজেশ্বর একটু দাড়াইল । সেই অবকাশে গৃহিণী কৰ্ত্তাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি যে বোঁকে তাড়াবে—বে খাবে কি করিয়া ?” কৰ্ত্ত বলিলেন, “যা খুসি করুক-চুরি করুক, ডাকাতি করুক-ভিক্ষা করুক।” গৃহিণী ব্ৰঞ্জেশ্বরকে বলিয়া দিলেন, “তাড়াইবার সময়ে বোমাকে এই কথা বলিও । সে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল।” o - ব্ৰজেশ্বর পিতার নিকট হইতে বিদায় হইয়া ব্রহ্মঠাকুরাণীর নিকুঞ্জে গিয়া দর্শন দিলেন। দেখিলেন, ব্ৰহ্মঠাকুরাণী তদগতচিত্তে মালা জপ করিতেছেন, আর মশা তাড়াইতেছেন। ব্ৰজেশ্বর বলিলেন, “ঠাকুরমা !” ব্ৰহ্ম । কেন, ভাই ? ব্রজ। আজ না কি নুতন খবর? ব্রহ্ম। কি নুতন ? সাগর আমার চরকাটা ভেঙ্গে দিয়েছে তাই ? তা ছেলেমানুষ, দিয়েছে দিয়েছে। চরকা কাটতে তার সাধ গিয়েছিল— ব্রজ । তা নয় তা নয়—বলি আজ না কিব্ৰহ্ম। সাগরকে কিছু বলিও না। তোমরা বেঁচে থাক, আমার কত চরকা হবে। তবে বুড়ো মানুষ— ব্রজ। বলি আমার কথাটা শুনবে ? ব্ৰহ্ম। বুড়ো মানুষ, কবে আছি কবে নেই, দুটাে পৈতে তুলে বামুনকে দিই বই ত নয়। তা যাক গে— - ব্রজ। আমার কথাটা শোন, নইলে তোমার যত চরকা হবে, সব আমিই ভেঙ্গে দেব । ব্ৰহ্ম। কি বলছ ? চরকার কথা নয় ? ব্রজ। তা নয়—আমার দুইটি ব্রাহ্মণী আছে জান ত ? ব্ৰহ্ম। ব্রাহ্মণী ? মা মা মা ! যেমন ব্রাহ্মণী নয়ান বে, তেমনি ব্রাহ্মণী সাগর বেী— আমার হাড়টা খেলে—কেবল রূপকথা বল–রপকথা বল—রপকথা বল! ভাই, এত রূপকথা পাব কোথা ?
পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।