প্রথম খণ্ড-দশম পরিচ্ছেদ や愛 হইতে ধন সকল এইখানে আনিলেন। স্বহস্তে তাহা মাটিতে পুতিয়া রাখিলেন। আর কেহ জানিল না যে, কোথায় ধন রহিল। যুদ্ধে নীলাম্বর বন্দী হইলেন। পাঠান-সেনাপতি র্তাহাকে গৌড়ে চালান করিল। তার পর আর র্তাহাকে মনুষ্য-লোকে কেহ দেখে নাই। র্তাহার শেষ কি হইল, কেহ জানে না। তিনি আর কখনও দেশে ফেরেন নাই। সেই অবধি র্তাহার ধনরাশি সেইখানে পোতা রহিল। সেই ধনরাশি কৃষ্ণগোবিন্দ পাইল । সুবর্ণ, হীরক, . মুক্ত, অন্ত রত্ন অসংখ্য—অগণ্য, কেহ স্থির করিতে পারে না কত। কৃষ্ণগোবিন্দ কুড়ি ঘড়া এইরূপ ধন পাইল । কৃষ্ণগোবিন্দ ঘড়াগুলি সাবধানে পুতিয়া রাখিল । বৈষ্ণবীকে এক দিনের তরেও এ ধনের কথা কিছুই জানিতে দিল না। কৃষ্ণগোবিন্দ অতিশয় কৃপণ, ইহা হইতে একটি মোহর লইয়াও কখনও খরচ করিল না। এ ধন গায়ের রক্তের মত বোধ করিত। সেই ভাড়ের টাকাতেই কায়ক্লেশে দিন চালাইতে লাগিল। সেই ধন এখন প্রফুল্ল পাইল । ঘড়াগুলি বেশ করিয়া পুতিয়া রাখিয়া আসিয়া প্রফুল্ল শয়ন করিল। সমস্ত দিনের পরিশ্রমের পর, সেই বিচালির বিছানায় প্রফুল্ল শীঘ্রই নিদ্রায় অভিভূত হইল। " দশম পরিচ্ছেদ এখন একটু ফুলমণির কথা বলি। ফুলমণি নাপিতানী হরিণীর ন্যায় বাছিয়া বাছিয়া দ্রুতপদ জীবে প্রাণ-সমর্পণ করিয়াছিল। ডাকাইতের ভয়ে দুর্লভচন্দ্র আগে আগে পলাচলেন, ফুলমণি পাছু পাছু ছুটিয়া গেল। কিন্তু ছলভের এমনই পলাইবার রোখা যে, তিনি পশ্চাদ্ধাবিত প্রণয়িনীর কাছে নিতান্ত দুর্লভ হইলেন । ফুলমণি যত ডাকে, “ও গো দাড়াও গো! আমায় ফেলে যেও না গে৷ ” দুর্লভচন্দ্র তত ডাকে, “ও বাবা গো ! ঐ এলো গো !” কাট-বনের ভিতর দিয়া, পগার লাফাইয়া, কাদা ভাঙ্গিয়া, উৰ্দ্ধশ্বাসে দুর্লভ ছোটে—হায়! কাছা খুলিয়া গিয়াছে, এক পায়ের নাগরা জুতা কোথায় পড়িয়া গিয়াছে, চাদরখানা একটা কাটা-বনে বিধিয়া তাহার বীরত্বের নিশানস্বরূপ বাতাসে উড়িতেছে। তখন ফুলমণি সুন্দরী হাকিল, “ও অধঃপেতে মিন্সে—ওরে মেয়েমানুষকে ভুলিয়ে এনে—এমনি করে কি ডাকাতের হাতে সঁপে দিয়ে যেতে হয় রে মিন্সে ?” শুনিয়া তুর্লভচন্দ্র ভাবিলেন, তবে নিশ্চিত ইহাকে ডাকাইতে ধরিয়াছে। অতএব তুর্লভচন্দ্র বিনাবাকাবায় আরও বেগে ধাবমান হইলেন। ফুলমণি ডাকিল, “ও অধঃপেতে—ও পোড়ারমুখে—ও অঁাটকুড়ির পুত-ও হাবাতে-ও
পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।