দ্বিতীয় খণ্ড—তৃতীয় পরিচ্ছেদ . فيه পরিচারিক কাদিতে কঁাদিতে উঠিয়া স্তম্ভিতের স্তায় দাড়াইয়া রহিল। সাগরেরও গায়ে ঘাম দিতেছিল। সাগরের মুখেও কথা ফুটিল না। যে নাম তাহাদের কানে প্রবেশ করিয়াছিল, তাহা ছেলে বুড়ো কে না শুনিয়াছিল ? সে নাম অতি ভয়ানক । কিন্তু সাগর আবার ক্ষণেক পরে হাসিয়া উঠিল। তখন দেবী চৌধুরাণীও হাসিল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ বর্ষাকাল। রাত্রি জ্যোৎস্না। জ্যোৎস্না এমন বড় উজ্জল নয়, বড় মধুর, একটু অন্ধকারমখ–পৃথিবীর স্বপ্নময় আবরণের মত। ত্রিস্রোতা নদী বর্ষাকালের জলপ্লাবনে কুলে কুলে পরিপূর্ণ। চন্দ্রের কিরণ সেই তীব্ৰগতি নদীজলের স্রোতের উপর—স্রোতে, আবৰ্ত্তে, কদাচিৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গে, জ্বলিতেছে। কোথাও জল একটু ফুটিয়া উঠিতেছে—সেখানে একটু । চিকিমিকি ; কোথাও চরে ঠেকিয়া ক্ষুদ্র বীচিভঙ্গ হইতেছে, সেখানে একটু ঝিকিমিকি। তীরে, গাছের গোড়ায় জল আসিয়া লাগিয়াছে—গাছের ছায়া পড়িয়া সেখানে জল বড় অন্ধকার ; অন্ধকারে গাছের ফুল, ফল, পাতা বাহিয়া তীব্র স্রোত চলিতেছে ; তীরে ঠেকিয়া জল একটু তর-তর কল-কল পত-পত শব্দ করিতেছে—কিন্তু সে আঁধারে আঁধারে । আঁধারে, আঁধারে, সেই বিশাল জলধারা সমুদ্রানুসন্ধানে পক্ষিণীর বেগে ছুটয়াছে। কুলে কুলে অসংখ্য কল-কল শব্দ, আবৰ্ত্তের ঘোর গর্জন, প্রতিহত স্রোতের তেমনি গর্জন ; সৰ্ব্বশুদ্ধ একটা গম্ভীর গগনব্যাপী শব্দ উঠিতেছে। সেই ত্রিস্রোতার উপরে, কুলের অনতিদূরে একখানি বজরা বাধা আছে। বজরার অনতিদূরে, একটা বড় তেঁতুলগাছের ছায়ায়, অন্ধকারে আর একখানি নৌকা আছে— তাহার কথা পরে বলিব, আগে বজরার কথা বসি । বজরাখানি নানা বর্ণে চিত্রিত ; তাহাতে কত রকম মূরদ আঁকা আছে। তাহার পিতলের হাতল ডাণ্ডা প্রভৃতিতে রূপার গিলটি । গলুইয়ে একটা হাঙ্গরের মুখ—সেটাও গিলটি করা । সৰ্ব্বত্র পরিষ্কার—পরিচ্ছন্ন, উজ্জ্বল, আবার নিস্তন্ধ নাবিকেরা এক পাশে বাশের উপর পাল ঢাকা দিয়া শুইয়া আছে ; কেহ জাগিয়া থাকার চিহ্ন নাই। কেবল বজরার ছাদের উপর—এক জন মানুষ। অপূৰ্ব্ব দৃশু ! . ছাদের উপর একখানি ছোট গালিচা পাতা। গালিচাখানি দুই আঙ্গুল পুরু—বড় কোমল, নানাবিধ চিত্রে চিত্রিত। গালিচার উপর বসিয়া একজন স্ত্রীলোক। তাহার বয়স অনুমান করা ভার—পচিশ বৎসরের নীচে তেমন পূর্ণায়ত দেহ দেখা যায় না ; পচিশ বৎসরের ", لا ۵
পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।