পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. . . . . . চতুর্থ পরিচ্ছেদ - ੋ . পূৰ্ব্বে বলিয়াছি, বজরার কাছে তেঁতুলগাছের ছায়ায় আর একখানি নৌকা অন্ধকারে লুকাইয়াছিল। সেখানি ছিপ-ষাট হাত লম্ব, তিন হাঙের বেশী চৌড় নয়। তাহাতে প্রায় পঞ্চাশ জন মানুষ গাদাগাদি হইয়া শুইয়াছিল। রঙ্গরাজের সঙ্কেত শুনিবামাত্র সেই পঞ্চাশ জন একেবারে উঠিয়া বসিল। বঁাশের চেলা তুলিয়া সকলেই এক এক গাছ। সড় কি ও এক এক খান ছোট ঢাল বাহির করিল। হাতিয়ার কেহ হাতে রাখিল না—সবাই আপনার নিকট চেলার উপরে সাজাইয়া রাখিল । রাখিয়া সকলেই এক এক খান “বোটে” হাতে করিয়া বসিল । - নিঃশব্দে ছিপ খুলিয়, তাহারা বজরায় আসিয়া লাগাইল । রঙ্গরাজ তখন নিজে পঞ্চ হাতিয়ার বাধিয়া উহার উপর উঠিল। সেই সময়ে যুবতী তাহাকে ডাকিয়া বলিল, “রঙ্গরাজ, আগে যাহা বলিয়া দিয়াছি, মনে থাকে যেন ।” “মনে আছে” বলিয়া রঙ্গরাজ ছিপে উঠিল। ছিপ নিঃশব্দে তীরে তীরে উজাইয়া চলিল। এদিকে যে বজরা রঙ্গরাজ দূরবীণে দেখিয়াছিল, তাহা নদী বাহিয়া খরস্রোতে তীব্রবেগে আসিতেছিল। ছিপকে বড় বেশী উজাইতে হইল না। বজরা নিকট হইলে, ছিপ তীর ছাড়িয়া বজরার দিকে ধাবমান হইল। পঞ্চাশখানা বোটে, কিন্তু শব্দ নাই। এখন, সেই বজরার ছাদের উপুরে আট জন হিন্দুস্থানী রক্ষক ছিল। এত লোক সঙ্গে না করিয়া তখনকার দিনে কেহ রাত্রিকালে নৌকা খুলিতে সাহস করিত না । আট জনের মধ্যে, ছুই জন হাতিয়ারবন্ধ হইয়া, মাথায় লাল পাগড়ি বাধিয়া ছাদের উপর । বসিয়াছিল—আর ছয় জন মধুর দক্ষিণ বাতাসে চাদের আলোতে কাল দাড়ি ছড়াইয়া, স্বনিদ্র । অভিভূত ছিল। যাহারা পাহারায় ছিল, তাহাদের মধ্যে এক জন দেখিল—ছিপ বজরার দিকে আসিতেছে। সে দস্তুরমত হাকিল, “ছিপ তফাৎ " . রঙ্গরাজ উত্তর করিল, “তোর দরকার হয়, তুই তফাৎ যা।” - প্রহরী দেখিল, বেগেছে। ভয় দেখাইবার জন্য বন্দুকে একটা ফাক আওয়াজ করিল। রঙ্গরাজ বুঝিল, ফাক আওয়াজ। হাসিয়া বলিল, “কি পাড়ে ঠাকুর! একটা ছররাও নাই ? ধার দিব ?” - * এই ইলিয়া রঙ্গরাজ সেই প্রহরীর মাথা লক্ষ্য করিয়া বন্দুক উঠাইল। তার পর বন্দুক নামাইয়া বলিল, “তোমায় এবার মারিব না। এবার তোমার লাল পাগড়ি উড়াইব ।” এই