দ্বিতীয় খণ্ড-সপ্তম পরিচ্ছেদ ব্ৰজেশ্বরের ছরদৃষ্ট, তিনি পাঁচকড়িকে মুখরা দেখিয়া, একটি ছোট রকমের রসিকতা । করিতে গেলেন। এই দম্যনেত্রীদিগের কোন রকমে খুলি করিয়া মুক্তি লাভ করেন, সে অভিপ্রায়ও ছিল। অতএব পাঁচকড়ির কথার উত্তরে বলিলেন, “তোমাদের মত মুন্দরীর পা টিপিব, সে ত ভাগ্য—” । “তবে একবার টেপ না” বলিয়া অমনি পাচকড়ি আলতাপরা রাঙ্গা পাখানি ব্ৰজেশ্বরের উরুর উপর তুলিয়া দিল। - ব্ৰজেশ্বর নাচার—আপনি পা টেপার নিমন্ত্রণ লইয়াছেন, কি করেন। ব্রজেশ্বর কাজেই দুই হাতে পা টিপিতে আরম্ভ করিলেন। মনে করিলেন, “এ কাজটা ভাল হইতেছে না, ইহার প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে। এখন উদ্ধার পেলে বাচি ।” তখন তুষ্ট পাঁচকড়ি ডাকিল, “রাণীজি ! একবার এদিকে আসুন।” দেবী আসিতেছে, ব্রজেশ্বর পায়ের শব্দ পাইল। পা নামাইয়া দিল। পাঁচকড়ি হাসিয়া বলিল, “সে কি ? পিছাও কেন ?" পাঁচকড়ি সহজ গলায় কথা কহিয়াছিল। ব্ৰজেশ্বর বড় বিস্মিত হইলেন,—“সে কি ? এ গলা ত চেনা গলাই বটে।” সাহস করিয়া ব্ৰজেশ্বর পাঁচকড়ির মুখঢাকা রুমালখানা খুলিয়া লইলেন। পাঁচকড়ি খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। - - ব্ৰজেশ্বর বিস্মিত হইয়া বলিল, “সে কি ? এ কি ? তুমি—তুমি সাগর ?” পাঁচকড়ি বলিল, “আমি সাগর। গঙ্গা নই—যমুনা নই—বিল নই—খাল নই—সাক্ষাৎ সাগর। তোমার বড় অভাগ্য—না ? যখন পরের স্ত্রী মনে করিয়াছিলে, তখন বড় আছাদ করিয়া পা টিপিতেছিলে, আর যখন ঘরের স্ত্রী হইয়া পা টিপিতে বলিয়াছিলাম, তখন রাগে গরগর করিয়া চলিয়া গেলে ! যাক, এখন আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা হইয়াছে। তুমি আমার পা টিপিয়াছ। এখন আমার মুখপানে চাহিয়া দেখিতে পার, আমায় ত্যাগ কর, আর পায়ে রাখ—এখন জানিলে, আমি যথার্থ ব্রাহ্মণের মেয়ে ।” সপ্তম পরিচ্ছেদ ব্ৰজেশ্বর কিয়ৎক্ষণ বিহ্বল হইয়া রহিল। শেষে জিজ্ঞাসা করিল, “সাগর ! তুমি এখানে কেন ?" সাগর বলিল, “সাগরের স্বামী ! তুমিই বা এখানে কেন ?” ব্র। তাই কি ? আমি কয়েদী, তুমিও কি কয়েদী ? আমাকে ধরিয়া আনিয়াছে। তোমাকেও কি ধরিয়া আনিয়াছে।
পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।