Şeô ধৰ্ম্মতত্ত্ব জ্ঞান ও আনন্দময় চৈতন্যকে যে জানিয়াছে, সৰ্ব্বভূতে যাহার আত্মজ্ঞান আছে, যে অম্ভেদ, অথবা সেইরূপ জ্ঞান ও চিত্তের অবস্থা প্রাপ্তিতে যাহার যত্ন আছে, সেই বৈষ্ণব ও সেই হিন্দু। তদ্ভিন্ন যে কেবল লোকের দ্বেষ করে, লোকের অনিষ্ট করে, পরের সঙ্গে বিবাদ করে, লোকের কেবল জাতি মারিতেই ব্যস্ত, তাহার গলায় গোচ্ছা করা পৈতা, কপালে কপাল-জোড়া ফোট, মাথায় টিকি, এবং গায়ে নামাবলি ও মুখে হরিনাম থাকিলেও, তাহাকে হিন্দু বলিব না। সে মেচ্ছের অধম মেচ্ছ, তাহার সংস্পর্শে থাকিলেও হিন্দুর হিন্দুয়ানি যায়। বিংশতিতম অধ্যায়।-ভক্তি। ভক্তির সাধন । শিষ্য। এক্ষণে আপনাকে জিজ্ঞাস্ত যে, আপনার নিকট যে ভক্তির ব্যাখ্যা শুনিলাম, তাহা সাধন না সাধ্য ? গুরু । ভক্তি, সাধন ও সাধ্য। ভক্তি মুক্তিপ্রদা, এজন্য ভক্তি সাধন। আর ভক্তি মুক্তিপ্রদ হইলেও মুক্তি বা কিছুই কামনা করে না, এজন্য ভক্তিই সাধ্য। শিষ্য। তবে, এই ভক্তির সাধন কি শুনিতে ইচ্ছা করি । ইহার অনুশীলন প্রথা কি ? উপাসনাই ভক্তির সাধন বলিয়া চিরপ্রথিত, কিন্তু আপনার ব্যাখ্যা যদি যথার্থ হয়, তবে ইহাতে উপাসনার কোন স্থান দেখিতেছি না। । গুরু । উপাসনার যথেষ্ট স্থান আছে, কিন্তু উপাসনা কথাটা অনেক প্রকার অর্থে ব্যবহৃত হইয় থাকে, ইহাতে গোলযোগ হইতে পারে বটে। সকল বৃত্তিগুলিকে ঈশ্বরমুখী করিবার যে চেষ্টা, তাহার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ উপাসনা আর কি হইতে পারে ? তুমি অমুদিন সমস্ত কার্য্যে ঈশ্বরকে আন্তরিক চিন্তা না করিলে কখনই তাহ পারিবে না । শিষ্য। তথাপি হিন্দুশাস্ত্রে এই ভক্তির অনুশীলনের কি প্রথা প্রচলিত আছে, তাহ জানিতে ইচ্ছা করি। আপনি যে ভক্তিতত্ত্ব বুঝাইলেন, তাহ হিন্দুশাস্ত্রোক্ত ভক্তি হইলেও হিন্দুদিগের মধ্যে বিরল। হিন্দুর মধ্যে ভক্তি আছে ; কিন্তু সে আর এক রকমের। প্রতিম। গড়িয়া, তাহার সম্মুখে যোড়হাত করিয়া, পট্টবস্ত্র গলদেশে দিয়া গদগদভাবে অশ্রুমোচন, “হরি । হরি।” বা “মা ! ম৷ ” ইত্যাদি শব্দে উচ্চতর গোলযোগ,
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।