Y}o ধৰ্ম্মতত্ত্ব গুরু। তাহাও নিকৃষ্ট সাধন। উৎকৃষ্ট সাধন যাহা তোমাকে কৃষ্ণোক্তি উদ্ধৃত করিয়া শুনাইয়াছি। যে তাহাতে অক্ষম, সেই পুজাদি করিবে। তবে স্তুতি বন্দন প্রভৃতি সম্বন্ধে একটা বিশেষ কথা আছে। যখন কেবল ঈশ্বরচিন্তাই উহার উদ্দেশু, তখন উহ মুখ্যভক্তির লক্ষণ। যথা বিপন্মুক্ত প্রহ্নাদকৃত বিষ্ণু-স্তুতি মুখ্যভক্তি। আর “আমার পাপ ক্ষালিত হউক,” “আমার সুখে দিন যাউক,” ইত্যাদি সকাম সন্ধ্যাবন্দনা, স্তুতি বা Prayer, গৌণভক্তি মধ্যে গণ্য। আমি তোমাকে পরামর্শ দিই যে, কৃষ্ণোক্তির অনুবর্তী হইয়া ঈশ্বরের কৰ্ম্মতৎপর হও । শিষ্য। সেও ত পূজা, হোম, যাগ যজ্ঞ— গুরু। সে অার একটি ভ্রম। এ সকল ঈশ্বরের জন্ত কৰ্ম্ম নহে ; এ সকল সাধকের নিজ মঙ্গলোদিষ্ট কৰ্ম্ম—সাধকের নিজের কার্য্য ; ভক্তির বৃদ্ধি জন্যও যদি এ সকল কর, তথাপি তোমার নিজের জন্যই হইল। ঈশ্বর জগন্ময় ; জগতের কাজই তাহার কাজ । অতএব যাহাতে জগতের হিত হয়, সেই সকল কৰ্ম্মই কৃষ্ণোক্ত “মৎকৰ্ম্ম” ; ভtহার সাধনে তৎপর হও, এবং সমস্ত বৃত্তির সম্যক অনুশীলনের দ্বারায় সে সকল সম্পাদনের যোগ্য হও । তাহা হইলে র্যাহার উদ্দিষ্ট সেই সকল কৰ্ম্ম, তাহাতে মন স্থির হইবে । তাহা হইলে ক্রমশঃ জীবন্মুক্ত হইবে। জীবন্মুক্তিই মুখ। বলিয়াছি, “মুখের উপায় ধৰ্ম্ম।” এই জীবন্মুক্তি সুখের উপায়ই ধৰ্ম্ম । রাজসম্পদাদি কোন সম্পদেই তত সুখ নাই । যে ইহা না পরিবে, সে গৌণ উপাসনা অর্থাৎ পূজা, নামকীৰ্ত্তন, সন্ধ্যবিন্দনাদির দ্বার ভক্তির নিকৃষ্ট অনুশীলনে প্রবৃত্ত হউক । কিন্তু তাহা করিতে হইলে, অন্তরের সহিত সে সকলের অনুষ্ঠান করিবে । তদ্ব্যতীত ভক্তির কিছুমাত্র অমুশীলন হয় না। কেবল বাহাড়ম্বরে বিশেষ অনিষ্ট জন্মে। উহ। তখন ভক্তির সাধন না হইয়া কেবল শঠতার সাধন হইয়া পড়ে। তাহার অপেক্ষা সৰ্ব্বপ্রকার সাধনের অভাবই ভাল। কিন্তু, যে কোন প্রকার সাধনে প্রবৃত্ত নহে, সে শঠ ও ভণ্ড হইতে শ্রেষ্ঠ হইলেও, তাহার সঙ্গে পশুগণের প্রভেদ অল্প । শিষ্য। তবে, এখনকার অধিকাংশ বাঙ্গালি হয় ভুগু ও শঠ, নয় পশুবৎ । গুরু । হিন্দুর অবনতির এই একটা কারণ। কিন্তু তুমি দেখিবে শীঘ্রই বিশুদ্ধ ভক্তির প্রচারে হিন্দু নবজীবন প্রাপ্ত হইয়া, ক্রমওয়েলের সমকালিক ইংরেজের মত বা মহম্মদের সমকালিক আরবের মত, অতিশয় প্রতাপান্বিত হইয়া উঠিবে। শিষ্য। কায়মনোবাক্যে জগদীশ্বরের নিকট সেই প্রার্থনা করি ।
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।