ফুরণক্ষম; মৃতরাং অনুশীলিত হইতে থাকিলেই ইহা গৃহের ক্ষুদ্র সীমা ছাপাইয়া বাহির হইতে চাহিবে । অতএব ইহা ক্রমশঃ কুটুম্ব, বন্ধুবৰ্গ, অস্থগত, ও আশিতে, গোষ্ঠীতে, গোত্রে সমষ্টি হয়। ইহাতেও অনুশীলন থাকিলে ইহার ক্ষুক্তিশক্তি সীমা প্রাপ্ত হয় না। ক্রমে আপনার গ্রাম , নগরস্থ, দেশস্থ, মনুষ্যমাত্রের উপর নিবিষ্ট হয়। যখন নিখিল জন্মভূমির উপর এই ঐতি বিস্তারিত হয় তখন ইহা সচরাচর দেশবাৎসল্য নাম প্রাপ্ত হয়। এই অবস্থায় এই বৃত্তি অতিশয় বলবতী হইতে পারে এবং হইয়াও থাকে ৷ হইলে, ইহা জাতি বিশেষের বিশেষ মঙ্গলের কারণ হয় । ইউরোপীয়দিগের মধ্যে প্রতিবৃত্তির এই অবস্থা সচরাচর প্রবল দেখা যায়। ইউরোপীয়দিগের জাতীয় উন্নতি যে এতটা বেশী হইয়াছে, ইহা তাহার এক কারণ। শিষ্য। ইউরোপে দেশবাৎসল্যের এত প্রাবল্য এবং আমাদের দেশে নাই, তাহা কারণ কি আপনি কিছু বুঝাইতে পারেন ? - গুরু। উত্তমরূপে পারি। ইউরোপের ধৰ্ম্ম, বিশেষতঃ পূৰ্ব্বতন ইউরোপের ধৰ্ম্ম, . হিন্দুধর্মের মত উন্নত ধৰ্ম্ম নহে ; ইহাই সেই কারণ। একটু সবিস্তারে সেই কথাটা : বুঝাইতেছি, তাহ শুন । দেশবাৎসল্য প্রতিবৃত্তির ফুৰ্ত্তির চরম সীমা নহে। তাহার উপর আর এক সোপান আছে। সমস্ত জগতে যে প্রীতি, তাহাই প্রতিবৃত্তির চরম সীমা । তাহাই যথার্থ ধৰ্ম্ম । যত দিন ঐতির জগৎপরিমিত ফুৰ্ত্তি না হইল, তত দিন গ্ৰীতিও অসম্পূর্ণ—ধৰ্ম্মও অসম্পূর্ণ। এখন দেখা যায় যে, ইউরোপীয়দিগের প্রতি আপনাদের স্বদেশেই পর্য্যবসিত হয়, সমস্ত মনুষ্যলোকে ব্যাপ্ত হইতে সচরাচর পারে না। আপনার জাতিকে ভাল বাসেন, অন্য জাতীয়কে দেখিতে পারেন না, ইহাই তাহাদের স্বভাব। অন্যান্ত জাতির মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায় যে, তাহারা স্বধৰ্ম্মীকে ভাল বাসে, বিধৰ্ম্মীকে দেখিতে পারে না। মুসলমান ইহার উদাহরণ। কিন্তু ধৰ্ম্ম এক হইলে, জাতি লইয়া তাহারা বড় আর দ্বেষ করে না। মুসলমানের চক্ষে সব মুসলমান প্রায় তুল্য ; কিন্তু ই রেঞ্জখ্ৰীষ্টিয়ান ও রুষগ্ৰীষ্টিয়ামের মধ্যে বড় গোলযোগ । শিষ্য। এস্থলে মুসলমানেরও প্রীতি জাগতিক নহে, ইউরোপের প্রতিও জাগতিক নহে । গুরু। মুসলমানের খ্ৰীতি-বিস্তারের নিরোধক তাহার ধৰ্ম্ম। জগৎমৃদ্ধ মুসলমান হইলে জগৎসুদ্ধ সে ভাল বাসিতে পারে, কিন্তু জগৎমৃদ্ধ খ্ৰীষ্টিয়ান হইলে জৰ্ম্মাণ জার্মাণ ভিন্ন, i
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।