পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় অধ্যায় —মুখ কি? ৭ । গুরু। অনুশীলনতত্ত্বটা মা বুঝিয়াই আগে হইতে কি প্রকারে সে কথা বুঝিবে ? মুখচুঃখ মানসিক অবস্থা মাত্র—সুখদুঃখের কোন বাহিক অস্তিত্ব নাই। মানসিক অবস্থা মাত্রেই যে সম্পূর্ণরূপে অনুশীলনের অধীন, তাহা তুমি স্বীকার করিবে। এবং ইহাও বুঝিতে পারবে যে, মানসিক শক্তি সকলের যথাবিহিত অনুশীলন হইলে গৃহদাহ আর ছখ বলিয়া বোধ হইবে না। o শিষ্য। অর্থাৎ বৈরাগ্য উপস্থিত হইলে হইবে না। কি ভয়ানক । - গুরু। সচরাচর যাহাকে বৈরাগ্য বলে, তাহ ভয়ানক ব্যাপার হইলে হইতে পারে। কিন্তু তাহার কথা হইতেছে কি ? 端 শিষ্য। হইতেছে বৈ কি ? হিন্দুধর্মের টান সেই দিকে। সাংখ্যকার বলেন, তিন প্রকার দুঃখের অত্যন্ত নিবৃত্তি পরমপুরুষাৰ্থ। তার পর আর এক স্থানে বলেন যে, মুখ এত অল্প যে, তাহাও ফুঃখ পক্ষে নিক্ষেপ করিবে। অর্থাৎ সুখ দুঃখ সব ত্যাগ করিয়া, জড়পিণ্ডে পরিণত হও। আপনার গীতোক্ত ধৰ্ম্মও তাই বলেন। শীতোষ্ণ মুখস্থখাদিৰন্থ সকল তুল্য জ্ঞান করিবে। যদি মুখে সুখী না হইবে—তবে জীবনে কাজ কি ? যদি ধৰ্ম্মের উদ্দেশু । সুখ পরিত্যাগ, তবে আমি সে ধৰ্ম্ম চাই না । এবং অনুশীলনতত্বের উদেখ যদি ঈদৃশ ধৰ্ম্মই হয়, তবে আমি অনুশীলনতত্ত্ব শুনিতে চাই না । o - গুরু । অত রাগের কথা কিছু নাই—আমার এই অনুশীলনতত্ত্বে তোমার দুইটা মিঠাই খাওয়ার পক্ষে কোন আপত্তি হইবে না-বরং বিধিই থাকিবে । সাংখ্যদর্শনকে তোমাকে ধৰ্ম্ম বলিয়া গ্রহণ করিতে বলিতেছি না। শীতোষ্ণসুখদু:খাদিদ্বন্দ্বসম্বন্ধীয় যে উপদেশ, তাহারও এমন অর্থ নহে যে, মনুষ্যের সুখভোগ করা কৰ্ত্তব্য নহে। উহার অর্থ কি, তাহার কথায় এখন কাজ নাই। তুমি কাল বলিয়াছিলে যে, বিলাতী অনুশীলনের উদ্দেশু মুখ, ভারতবর্ষীয় অনুশীলনের উদ্দেশু মুক্তি। আমি তছত্তরে বলি, মুক্তি সুখের অবস্থাবিশেষ। মুখের পূর্ণমাত্রা এবং চরমোৎকর্ষ। যদি এ কথা ঠিক হয়, তাহা হইলে ভারতবর্ষীয় অনুশীলনের উদ্দেশ্যও মুখ । শিষ্য। অর্থাৎ ইহকালে দুঃখ ও পরকালে সুখ । গুরু। না, ইহকালে সুখ ও পরকালে সুখ । শিষ্য। কিন্তু আমার আপত্তির উত্তর হয় নাই—আমি ত বলিয়াছিলাম যে, জীব মুক্ত হইলে সে মুখস্থঃখের অতীত হয়। মুখশূন্ত যে অবস্থা, তাহাকে মুখ বলিব কেন ? - &