§ দ্বিতীয় অধ্যায়।—মুখ কি ? শিষ্য। বোধ করি কখন মুখদ হয় না, কিন্তু ক্রমে তিক্ত সহ হইয়া যায়। গুরু। সেইটুকু অভ্যাসের ফল । অনুশীলন, শক্তির অমুকুল , অভ্যাস, শক্তির প্রতিকূল। অনুশীলনের ফল শক্তির বিকাশ, অভ্যাসের ফল শক্তির বিকার। অনুশীলনের পরিণাম মুখ, অভ্যাসের পরিণাম সহিষ্ণুতা। এক্ষণে মিঠাই খাওয়ার কথাটা মনে কর । এখানে তোমার চেষ্টা স্বাভাবিক রসাস্বাদিনী শক্তির অমুকুল, এজন্য তোমার সে শক্তি অনুশীলিত হইয়াছে—মিঠাই খাইয়। তুমি সুখী হও । ঐরপ অনুশীলনবলে তুমি রোষ্ট বীফ খাইয়াও সুখী হইতে পার। অন্যান্য ভক্ষ্য পেয় সম্বন্ধেও সেইরূপ । - এ গেল একটা ইন্দ্রিয়ের সুখের কথা । আমাদের আর আর ইন্দ্রিয় আছে, সেই সকল ইন্দ্রিয়ের অনুশীলনেও ঐরূপ সুখোৎপত্তি। কতকগুলি শারীরিক শক্তি বিশেষের নাম দেওয়া গিয়াছে ইঞ্জিয় । আরও অনেকগুলি শারীরিক শক্তি আছে। যথা, গীতবাদ্যের তাল বোধ হয় যে শক্তির অনুশীলনে, তাহাও শারীরিক শক্তি। সাহেবেরা তাহার নাম দিয়াছেন muscular sense। এইরূপ আর আর শারীরিক শক্তি আছে। এ সকলের অনুশীলনেও ঐরূপ সুখ । তা ছাড়া, আমাদের কতকগুলি মানসিক শক্তি আছে। সেগুলির অনুশীলনের যে ফল, তাহাও মুখ । ইহাই সুখ, ইহা ভিন্ন অন্য কোন সুখ নাই। ইহার অভাব তুঃখ। বুঝিলে ? শিষ্য। না। প্রথমতঃ শক্তি কথাটাতেই গোল পড়িতেছে। মনে করুন, দয়া আমাদিগের মনের একটি অবস্থা। তাহার অনুশীলনে মুখ আছে। কিন্তু আমি কি বলিব যে, দয়া শক্তির অনুশীলন করিতে হইবে ? গুরু । শক্তি কথাটা গোলের বটে। তৎপরিবর্তে অন্ত শব্দের আদেশ করার প্রতি আমার কোন আপত্তি নাই । আগে জিনিসটা বুঝ, তার পর যাহা বলিবে, তাহাতেই বুঝা যাইবে । শরীর এক ও মন এক বটে, তথাপি ইহাদিগের বিশেষ বিশেষ ক্রিয়া আছে ; এবং কাজেই সেই সকল বিশেষ বিশেষ ক্রিয়ার সম্পাদনকারিণী বিশেষ বিশেষ শক্তি কল্পনা করা অবৈজ্ঞানিক হয় না। কেন না, আদৌ এই সকল শক্তির মূল এক হইলেও,কাৰ্য্যতঃ ইহাদিগের পার্থক্য দেখিতে পাই । যে অন্ধ, সে দেখিতে পায় না, কিন্তু শব্দ শুনিতে পায় ; যে বধির, সে শব্দ শুনিতে পায় না, কিন্তু চক্ষে দেখিতে পায়। কেহ কিছু স্মরণ রাখিতে পারে না, কিন্তু সে হয়ত সুকল্পনাবিশিষ্ট কবি ; আবার কেহ কল্পনায় অক্ষম, কিন্তু বড় মেধাবী। কেহ ঈশ্বরে ভক্তিশূন্ত, কিন্তু লোককে দয়া করে ; আবার নির্দয় লোককেও w
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।