পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুরু। ঘাসেরও সব আছে—তবে ক্ষুদ্র, অপরিণত । ঘাসকে বৃক্ষ বলিবে না। শিষ্য। ঘাস আবার বৃক্ষ ? : o গুরু। যদি ঘাসকে বৃক্ষ না বল, তবে যে মনুষের সকল বৃত্তিগুলি পরিণত হয় নাই, তাহাকেও মনুষ্য বলিতে পারা যায় না। ঘাসের যেমন উস্তিত্ত্ব আছে, একজন হটেন্টই বা চিপেবারও সেরূপ মনুষ্যত্ব আছে। কিন্তু যে উদ্ভিত্ত্বকে বৃক্ষত্ব বলি, সে যেমন ঘাসের নাই, তেমনি যে মনুষ্যত্ব মনুষ্যধৰ্ম্ম, হটেন্টটু বা চিপেবার সে মনুষ্যত্ব নাই। বৃক্ষত্বের উদাহরণ ছাড়িও না, তাহা হইলেই বুঝিবে। ঐ বঁাশঝাড় দেখিতেছ—উহাকে বৃক্ষ বলিবে ? শিষ্য। বোধ হয় খুলিব না। উহার কাও, শাখা ও পল্লব আছে ; কিন্তু কৈ ? উহার ফুল ফল হয় না ; উহার সৰ্ব্বাঙ্গীণ পরিণতি নাই ; উহাকে বৃক্ষ বলিব না। গুরু। তুমি অনভিজ্ঞ । পঞ্চাশ ষাট বৎসর পরে এক একবার উহার ফুল হয়। ফুল হইয়া ফল হয়, তাহ চালের মত । চালের মত তাহাতে ভাতও হয় । শিষ্য। তবে বঁাশকে বৃক্ষ বলিব । - গুরু। অথচ বঁাশ তৃণ মাত্র। একটি ঘাস উপড়াইয়া লইয়া গিয়া বঁাশের সহিত তুলনা করিয়া দেখ—মিলিবে । উদ্ভিত্তত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরাও বঁাশকে তৃণশ্রেণী মধ্যে গণ্য করিয়া গিয়াছেন। অতএব দেখ, ফুৰ্ত্তিগুণে তৃণে তৃণে কত তফাৎ। অথচ বাশের সর্বাঙ্গণ ফুৰ্ত্তি নাই। যে অবস্থায় মনুষ্যের সর্বাঙ্গীণ পরিণতি সম্পূর্ণ হয়, সেই অবস্থাকেই মনুষ্যত্ব বলিতেছি। শিষ্য। এরূপ পরিণতি কি ধৰ্ম্মের আয়ত্ত ? গুরু । উদ্ভিদের এইরূপ উৎকর্ষে পরিণতি, কতকগুলি চেষ্টার ফল ; লৌকিক কথায় তাহাকে কর্ষণ বা পাট বলে। এই কর্ষণ কোথাও মনুষ্য কর্তৃক হইতেছে, কোথাও প্রকৃতির দ্বারা হইতেছে। একটা সামান্ত উদাহরণে বুঝাইব । তোমাকে যদি কোন দেবতা আসিয়া বলেন যে, বৃক্ষ আর ঘাস, এই দুইই একত্র পৃথিবীতে রাখিব না। হয় সব বৃক্ষ নষ্ট করিব, নয় সব তৃণ নষ্ট করিব। তাহ হইলে তুমি কি চাহিবে ? বৃক্ষ রাখিতে চাহিবে, না ঘাস রাখিতে চাহিবে ? শিষ্য। বৃক্ষ রাখিব, তাহাতে সন্দেহ কি ? ঘাস না থাকিলে ছাগল গোরুর কিছু কষ্ট হইবে, কিন্তু বৃক্ষ না থাকিলে আম, কাটাল প্রভৃতি উপাদেয় ফলে বঞ্চিত হইব। গুরু। মূখ। তৃণ জাতি পৃথিবী হইতে অন্তৰ্হিত হইলে অন্নাভাবে মারা যাইবে যে 1 জান না যে, ধানও তৃণজাতীয় ? যে ভাটুই দেখিতেছ, উহা ভাল করিয়া দেখিয়া