পারে। অন্যান্ত ঐন্দ্রিয়িকের ভোগেরও সেইরূপ সীমা আছে। কিন্তু পরোপকার দণ্ডে দণ্ডে, পলকে পলকে করা যায়। মৃত্যুকাল পৰ্য্যন্ত ইহার অনুশীলন চলে। অনেক লোক মরণকালেও একটি কথা বা একটি ইঙ্গিতের দ্বারা লোকের উপকার করিয়া গিয়াছেন। আডিসন মৃত্যুকালেও কুপথাবলম্বী যুবাকে ডাকিয়া বলিয়াছিলেন, “দেখ, ধাৰ্ম্মিক ? (Christian) কেমন মুখে মরে ” তার পর, পরকালের কথা বলি। যদি জন্মান্তর না মানিয়া পরকাল স্বীকার করা যায়, তবে ইহা বলিতে হইবে যে, পরকালেও আমাদের মানসিক বৃত্তিগুলি থাকিবে, সুতরাং এ দয়া বৃত্তিটিও থাকিবে । আমি ইহাকে যেরূপ অবস্থায় লইয়া যাইব, পারলৌকিক প্রথমাবস্থায় ইহার সেই অবস্থায় থাকা সম্ভব, কেন না হঠাৎ অবস্থান্তরের উপযুক্ত কোন কারণ দেখা যায় না। আমি যদি ইহা উত্তমরূপে অনুশীলিত ও সুখপ্রদ অবস্থায় লইয়৷ যাই, তবে উহা পরলোকেও আমার পক্ষে সুখপ্রদ হইবে । সেখানে আমি ইহা অনুশীলিত ও চরিতার্থ করিয়া ইহলোকের অপেক্ষা অধিকতর সুখী হইব। শিষ্য। এ সকল সুখ-স্বপ্ন মাত্র—অতি অশ্রদ্ধেয় কথা। দয়ার অনুশীলন ও চরিতার্থত। কৰ্ম্মাধীন। পরোপকার কৰ্ম্মমাত্র। আমার কৰ্ম্মেন্দ্রিয়গুলি, আমি শরীরের সঙ্গে এখানে রাখিয়া গেলাম, সেখানে কিসের দ্বারা কৰ্ম্ম করিব ? গুরু। কথাটা কিছু নিৰ্ব্বোধের মত বলিলে। আমরা ইহাই জানি যে, যে চৈতন্ত্য শরীরবন্ধ, সেই চৈতন্তের কৰ্ম্ম কৰ্ম্মেন্দ্রিয়সাধ্য। কিন্তু যে চৈতন্য শরীরে বদ্ধ নহে, তাহারও কৰ্ম্ম যে কৰ্ম্মেশ্রিয়সাপেক্ষ, এমত বিবেচনা করিবার কোন কারণ নাই । ইহা যুক্তিসঙ্গত নহে । শিষ্য। ইহাই যুক্তিসঙ্গত। অন্যথা-সিদ্ধি-শূন্যস্ত নিয়ন্তপূর্ববৰ্ত্তিত কারণত্বং । কৰ্ম্ম অন্যথা-সিদ্ধি-শূন্ত। কোথাও আমরা দেখি নাই যে কৰ্ম্মেন্দ্রিয়শুন্য যে, সে কৰ্ম্ম করিয়াছে। গুরু । ঈশ্বরে দেখিতেছ। যদি বল ঈশ্বর মানি না, তোমার সঙ্গে আমার বিচার ফুরাইল। আমি পরকাল হইতে ধৰ্ম্মকে বিযুক্ত করিয়া, বিচার করিতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু ঈশ্বর হইতে ধৰ্ম্মকে বিযুক্ত করিয়া বিচার করিতে প্রস্তুত নহি । আর যদি বল, ঈশ্বর সাকার, তিনি শিল্পকারের মত হাতে করিয়া জগৎ গড়িয়াছেন, তাহা হইলেও তোমার সঙ্গে । বিচার ফুরাইল । কিন্তু ভরসা করি; তুমি ঈশ্বর মান এবং ঈশ্বরকে নিরাকার বলিয়াও স্বীকার কর। যদি তাহ কর, তবে কৰ্ম্মেন্দ্রিয়শূন্ত নিরাকারের কৰ্ম্মকর্তৃত্ব স্বীকার করিলে। কেন না, ঈশ্বর সর্বকৰ্ত্তা, সৰ্ব্বস্রষ্ট ।
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।