পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢९ ধৰ্ম্মতত্ত্ব অতিথিসৎকারের মাহাত্ম্য বুঝিতেন। এমনই আর শত শত উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে। সে সকল বিষয়ে নিরক্ষর প্রাচীনারাই জ্ঞানী, এবং আমাদের শিক্ষিত সম্প্রদায় অজ্ঞানী, ইহাই বলিতে হইবে । শিষ্য । ইহা শিক্ষিত সম্প্রদায়ের দোষ নহে, বোধ হয় ইংরেজি শিক্ষাপ্রণালীর দোষ। গুরু। সন্দেহ নাই। আমি যে অনুশীলনতত্ত্ব তোমাকে বুঝাইলাম অর্থাৎ সকল বৃত্তিগুলির সামঞ্জস্যপূর্বক অনুশীলন করিতে হইবে, এই কথাটি না বুঝাই এ দোষের কারণ । কাহারও কোন কোন বৃত্তির অনুশীলন কৰ্ত্তব্য, এরূপ লোক-প্রতীতি আছে, এবং তদনুরূপ কাৰ্য্য হইতেছে। এইরূপ লোক-প্রতীতির ফল আধুনিক শিক্ষাপ্রণালী। সেই শিক্ষাপ্রণালীতে তিনটি গুরুতর দোষ আছে। এই মনুষ্যত্বতত্ত্বের প্রতি মনোযোগী হইলেই, সেই সকল দোষের আবিষ্কার ও প্রতিকার করা যায়। শিষ্য। সে সকল দোষ কি ? গুরু। প্রথম, জ্ঞানার্জনী বৃত্তিগুলির প্রতিই অধিক মনোযোগ ; কাৰ্য্যকারিণী বা চিত্তরঞ্জিনীর প্রতি প্রায় অমনোযোগ । এই প্রথার অনুবর্তী হইয়া আধুনিক শিক্ষকের শিক্ষালয়ে শিক্ষা দেন বলিয়া, এ দেশে ও ইউরোপে এত অনিষ্ট হইতেছে। এ দেশে বাঙ্গালিরা অমানুষ হইতেছে ; তর্ককুশল, বাগ্মী বা সুলেখক—ইহাই বাঙ্গালির চরমোৎকর্ষের স্থান হইয়াছে। ইহারই প্রভাবে ইউরোপের কোন প্রদেশের লোক কেবল শিল্পকুশল, অর্থগুধু, স্বার্থপর হইতেছে ; কোন দেশে রণপ্রিয়, পরস্বাপহারী পিশাচ জন্মিতেছে। ইহারই প্রভাবে ইউরোপে এত যুদ্ধ, দুৰ্ব্বলের উপর এত পীড়ন। শারীরিক বৃত্তি,- কাৰ্য্যকারিণী বৃত্তি, মনোরঞ্জিনী বৃত্তি, যতগুলি আছে, সকলগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যযোগ্য যে বুদ্ধিবৃত্তির অমুশীলন তাহাই মঙ্গলকর ; সেগুলির অবহেলা, আর বুদ্ধিবৃত্তির অসঙ্গত ফুৰ্ত্তি মঙ্গলদায়ক নহে। আমাদিগের সাধারণ লোকের ধৰ্ম্মসংক্রান্ত বিশ্বাস এরূপ নহে। হিন্দুর পূজনীয় দেবতাদিগের প্রাধান্ত, রূপবান চন্দ্রে বা বলবান কাৰ্ত্তিকেয়ে নিহিত হয় নাই ; বুদ্ধিমান বৃহস্পতি বা জ্ঞানী ব্ৰহ্মায় অর্পিত হয় নাই ; রসজ্ঞ গন্ধৰ্ব্বরাজ বা বাগেদবীতে নহে। কেবল সেই সৰ্ব্বাঙ্গসম্পন্ন— অর্থাৎ সৰ্ব্বাঙ্গীণ পরিণতিবিশিষ্ট ষড়ৈশ্বৰ্য্যশালী বিষ্ণুতে নিহিত হইয়াছে। অনুশীলন নীতির স্থল গ্রস্থি এই যে, সৰ্ব্বপ্রকার বৃত্তি পরস্পর পরস্পরের সহিত সামঞ্জস্যবিশিষ্ট হইয়। অনুশীলিত হইবে, কেহ কাহাকে ক্ষুন্ন করিয়া অসঙ্গত বৃদ্ধি পাইবে না । -