আপনাদিগের জন্ত রাখিলেন, সেট কি? যাহার পর হুখের উপজীবিকা আর নাই, যাহার পর দারিদ্র্য আর কিছুতেই নাই—ভিক্ষা। এমন নিঃস্বার্থ উন্নতচিত্ত মন্থয়শ্রেণী ভূমণ্ডলে আর কোথাও জন্মগ্রহণ করেন নাই। র্তাহারা বাহাইরির জন্য বা পুণ্যসঞ্চয়ের জন্ত, বাছিয়া বাছিয়া ভিক্ষাবৃত্তিটি উপজীবিকা বলিয়া গ্রহণ করেন নাই। তাহারা । বুঝিয়াছিলেন যে, ঐশ্বৰ্য্য সম্পদে মন গেলে জ্ঞানোপার্জনের বিঘ্ন ঘটে, সমাজের শিক্ষাদানে । বিঘ্ন ঘটে। একমন, একধ্যান হইয়া লোকশিক্ষা দিবেন বলিয়াই, সৰ্ব্বত্যাগী হইয়াছিলেন। যথার্থ নিষ্কাম ধৰ্ম্ম যাহাদের হাড়ে হাড়ে প্রবেশ করিয়াছে, তাহারাই পরহিতব্ৰত সঙ্কল্প করিয়া এরূপ সৰ্ব্বত্যাগী হইতে পারে । তাহারা যে আপনাদিগের প্রতি লোকের অচলা ভক্তি আদিষ্ট করিয়াছিলেন, তাহাও স্বার্থের জন্য নহে। তাহারা বুঝিয়াছিলেন যে, সমাজশিক্ষকদিগের উপর ভক্তি ভিন্ন উন্নতি নাই, সেজন্য ব্রাহ্মণভক্তি প্রচার করিয়াছিলেন। এই সকল করিয়া তাহারা যে সমাজ ও যে সভ্যতার স্মৃষ্টি করিয়াছিলেন, তাহ আজিও জগতে অতুল্য, ইউরোপ আজিও তাহা অাদর্শস্বরূপ গ্রহণ করিতে পারে। ইউরোপে আজিও যুদ্ধটা সামাজিক প্রয়োজন মধ্যে। কেবল ব্রাহ্মণেরাই এই ভয়ঙ্কর তুঃখ-সকল দুঃখের উপর শ্রেষ্ঠ তুঃখ—সকল সামাজিক উৎপাতের উপর বড় উৎপাত—সমাজ হইতে উঠাইয়। দিতে পারিয়াছিলেন। সমাজ ব্রাহ্মণ্য নীতি অবলম্বন করিলে যুদ্ধের আর প্রয়োজন থাকে না। র্তাহাদের কীৰ্ত্তি অক্ষয় । পৃথিবীতে যত জাতি উৎপন্ন হইয়াছে, প্রাচীন ভারতের ব্রাহ্মণদিগের মত প্রতিভাশালী, ক্ষমতাশালী, জ্ঞানী ও ধাৰ্ম্মিক কোন জাতিই নহে। প্রাচীন এথেন্স বা রোম, মধ্যকালের ইতালি আধুনিক জৰ্ম্মনি বা ইংলণ্ডবাসী—কেহই তেমন প্রতিভাশালী বা ক্ষমতাশালী ছিলেন না ; রোমক ধৰ্ম্মযাজক, বৌদ্ধ ভিক্ষু, বা অপর কোন সম্প্রদায়ের লোক তেমন জ্ঞানী বা ধাৰ্ম্মিক ছিল না । শিষ্য। তা যাক। এখন দেখি ত ব্রাহ্মণের লুচিও ভাজেন, রুটীও বেচেন, কালী খাড়া করিয়া কসাইয়ের ব্যবসাও চালান। র্তাহাদিগকে ভক্তি করিতে হইবে ? গুরু। কদাপি না । যে গুণের জন্য ভক্তি করিব, সে গুণ যাহার নাই, তাহাকে ভক্তি করিব কেন ? সেখানে ভক্তি অধৰ্ম্ম। এইটুকু না বুঝাই, ভারতবর্ষের অবনতির
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।