পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ অধ্যায় –ঈশ্বরে ভক্তি। 曾帶 --ইহা ভিন্ন ধৰ্ম্মাম্ভর নাই। আমি ইহাই শিখাইতেছি । কিন্তু তুমি এমন মনে করিও না যে, এই কথা বুঝিলেই তুমি অনুশীলন ধৰ্ম্ম বুঝিলে । শিষ্য। আমি যে এখনও কিছু বুঝি নাই, তাহা আমি স্বয়ং স্বীকার করিতেছি। অমুশীলন ধৰ্ম্মে এই তত্ত্বের প্রকৃত স্থান কি, তাহ এখনও বুঝিতে পারি নাই। আপনি বৃত্তি ষে ভাবে বুঝাইয়াছেন, তাহাতে শারীরিক বল, অর্থাৎ মাংসপেশীর বল একটা Faculty না হউক, একটা বৃত্তি বটে। অনুশীলন ধৰ্ম্মের বিধানানুসারে, ইহার সমুচিত অনুশীলন চাই। মনে করুন, রোগ দারিদ্র্য আলস্য বা তাদৃশ অন্য কোন কারণে কোন ব্যক্তির এই বৃত্তির সমুচিত ফুৰ্ত্তি হয় নাই। তাহার কি ঈশ্বরভক্তি ঘটিতে পারে না ? গুরু । আমি বলিয়াছি যে, যে অবস্থায় মনুষ্যের সকল বৃত্তিগুলিই ঈশ্বরানুবৰ্ত্তী হয়, তাহাই ভক্তি। ঐ ব্যক্তির শারীরিক বল বেশী থাক, অল্প থাক, যতটুকু আছে, তাহা যদি ঈশ্বরানুবর্তী হয়, অর্থাৎ ঈশ্বরামুমত কার্য্যে প্রযুক্ত হয়—আর অন্ত বৃত্তিগুলিও সেইরূপ হয়, তবে তাহার ঈশ্বরে ভক্তি হইয়াছে। তবে অনুশীলনের অভাবে, ঐ ভক্তির কার্য্যকারিতার, সেই পরিমাণে ক্রটি ঘটিবে। এক জন দস্থ্য একজন ভাল মানুষকে পীড়িত করিতেছে। মনে কর, দুই ব্যক্তি তাহ দেখিল । মনে কর, দুই জনেই ঈশ্বরে ভক্তিযুক্ত কিন্তু এক জন বলবান, অপর দুর্বল। যে বলবান, সে ভাল মানুষকে দস্থ্যহস্ত হইতে মুক্ত করিল, কিন্তু যে দুর্বল, সে চেষ্টা করিয়াও পারিল না। এই পরিমাণে, বৃত্তিবিশেষের অনুশীলনের অভাবে, দুৰ্ব্বল ব্যক্তির মনুষ্যত্বের অসম্পূর্ণতা বলা যাইতে পারে, কিন্তু ভক্তির ক্রটি বলা যায় না। বৃত্তি সকলের সমুচিত ফুৰ্ত্তি ব্যতীত মমুন্যত্ব নাই ; এবং সেই বৃত্তিগুলি ভক্তির অনুগামী না হইলেও মনুষ্যত্ব নাই। উভয়ের সমাবেশেই সম্পূর্ণ মনুষ্যত্ব। ইহাতে বৃত্তিগুলির স্বাতন্ত্র্য রক্ষিত হইতেছে, অথচ ভক্তির প্রাধান্ত বজায় থাকিতেছে । তাই বলিতেছিলাম যে, বৃত্তিগুলির ঈশ্বরসমর্পণ, এই কথা বুঝিলেই মনুষ্যত্ব বুঝিলে না। তাহার সঙ্গে এটুকুও বুঝা চাই। শিষ্য। এখন আরও আপত্তি আছে। যে উপদেশ অনুসারে কার্য্য হইতে পারে না, তাহা উপদেশই নহে। সকল বৃত্তিগুলিই কি ঈশ্বরগামী করা যায় ? ক্রোধ একটা বৃত্তি, ক্রোধ কি ঈশ্বরগামী করা যায় ? গুরু। জগতে অতুল সেই মহাক্রোধগীতি তোমার কি স্মরণ হয় ? ক্ৰোধং প্রভো সংহরসংহরেতি, ぶ যাবৎ গির: খে মরুতাং চয়ন্তি ।