কেহই কখন নিদর্শী হইয়া অবস্থান করিতে পারে না। কৰ্ম্ম না করিলে প্রকৃতিৰাভ গুণ সকলের দ্বারা কৰ্ম্মে প্রবৃত্ত হইতে হইবে। অতএব কৰ্ম্ম করিতেই হইবে। কিন্তু সে কি কৰ্ম্ম ? - কৰ্ম্ম বলিলে বেদোক্ত কৰ্ম্মই বুঝাইত, অর্থাৎ আপনার মঙ্গলকামনায় দেবতার প্রসাদার্থ যাগযজ্ঞ ইত্যাদি বুঝাইত, ইহা পূর্বে বলিয়াছি। অর্থাৎ কাম কৰ্ম্ম বুঝাইত। এইখানে প্রাচীন বেদোক্ত ধৰ্ম্মের সঙ্গে কৃষ্ণোক্ত ধর্মের প্রথম বিলাপ, এইখান হইতে গীতোক্ত ধৰ্ম্মের উৎকর্ষের পরিচয়ের আরম্ভ। সেই বেদোক্ত কাম্য কৰ্ম্মের অনুষ্ঠানের নিন্দ করিয়া কৃষ্ণ বলিতেছেন, যামিমাং পুষ্পিতাং বাচং প্রবদস্তাবিপশ্চিত: | বেদৰাদরতা: পার্থ নান্তদস্তীতি বাদিনঃ ॥ কামাত্মানঃ স্বৰ্গপর জন্মকৰ্ম্মফল প্রদাম্। ক্রিয়াবিশেষবহুলাং ভোগৈশ্বৰ্য্যগতিং প্রতি ॥ ভোগৈশ্বৰ্য্যপ্রসক্তানাং তয়াপহতচেতসাম্। ব্যবসায়াত্মিক বুদ্ধি: সমাধৌ ন বিধীয়তে ॥ ২ । ৪২-৪৪ “যাহারা বক্ষ্যমানরূপ শ্রুতিমুখকর বাক্য প্রয়োগ করে, তাহারা বিবেকশ্বন্ত। যাহার বেদবাক্যে রত হইয়া, ফলসাধন কৰ্ম্ম ভিন্ন আর কিছুই নাই, ইহা বলিয়া থাকে, যাহারা কামপরবশ হইয়া স্বৰ্গই পরমপুরুষাৰ্থ মনে কলিয়া জন্মই কৰ্ম্মের ফল ইহা বলিয়া থাকে, যাহারা (কেবল) ভোগৈশ্বৰ্য্যপ্রাপ্তির সাধনীভূত ক্রিয়াবিশেষবহুল বাক্যমাত্র প্রয়োগ করে, তাহারা অতি মূর্খ। এইরূপ বাক্যে অপহৃতচিত্ত ভোগৈশ্বৰ্য্যপ্রসক্ত ব্যক্তিদিগের ব্যবসায়াত্মিক বুদ্ধি কখন সমাধিতে নিহিত হইতে পারে না।” অর্থাৎ বৈদিক কৰ্ম্ম বা কাম্য কৰ্ম্মের অনুষ্ঠান ধৰ্ম্ম নহে। অথচ কৰ্ম্ম করিতেই হইবে। তবে কি কৰ্ম্ম করিতে হইবে ? যাহা কাম্য নহে তাহাই নিষ্কাম । যাহা নিষ্কাম ধৰ্ম্ম বলিয়া পরিচিত, তাহ কৰ্ম্ম মার্গ মাত্র, কৰ্ম্মের অনুষ্ঠান । -
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।