পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অক্রূরসংবাদ
১০১

জংলী জংলী মনে হয়। কি আম্পর্ধা দেখুন! যার ছাগল-দাড়ি বা ইঁদুরে খাওয়ার মতন বিশ্রী দাড়ি তার অবশ্য না রাখাই উচিত। কিন্তু আমার মতন যার সুন্দর নিরেট দাড়ি সে কামাবে কোন্ দঃখে? সত্যভামার কথায় আমার মেজাজ গরম হয়ে উঠল। কোটি কোটি বৎসর ধরে পুরুষত্বের যে বীজ প্রাণিপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়ে এসেছে, যার প্রভাবে সিংহের কেশর, ষাঁড়ের ঝুঁটি, ময়ূরের পেখম আর মানুষের দাড়ি-গোঁফ উদ্ভূত হয়েছে, সেই দুর্দান্ত পুং-হরমোন আমার রক্তে মাংসে মজ্জায় কুপিত হয়ে উঠল, আমি ধমক দিয়ে বললুম, চোপ রও, ও কথা মুখে আনবে না, কামাতে চাও তো নিজের মাথা মুড়িয়ে ফেল। সত্যভামা একবার আমার দিকে কটকট করে তাকাল, তার পর উঠে চলে গেল। রাত্রে খাবার সময় ভাই বোন কাকেও দেখলাম না। পরদিন সকালের ট্রেনে আমি কলকাতায় রওনা হলুম।

 —তার পর আর কোথাও দু নম্বর দাম্পত্যের চেষ্টা করেছিলেন?

 —রাম বল, আবার! বুঝতে পারলুম, এক নম্বর দু নম্বর কোনওটাই আমার ধাতে সইবে না। তার পর হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করলুম, দাম্পত্যের তিন নম্বরও আছে, যাতে স্বামী-স্ত্রী নিজের নিজের মতে চলে অথচ সংঘর্ষ হয় না। আবিষ্কারটা ঠিক আমি করি নি, রবীন্দ্রনাথই করেছিলেন—

 —বলেন কি?

 —হাঁ, রবীন্দ্রনাথই করে গেছেন। কিন্তু লোকে তার গুরুত্ব বুঝতে পারেনি, তাঁর লেখা থেকে আমিই পুনরাবিষ্কার করেছি। তিনি কি লিখেছেন শুনতে চান?

 অক্রূরবাবু পাশের ঘর থেকে ‘শেষের কবিতা’ এনে পড়তে লাগলেন।—