পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
ধুস্তুরী মায়া

 অমিত রায় লাবণ্যকে বলছে—ওপারে তোমার বাড়ি, এপারে আমার।...একটি দীপ আমার বাড়ির চূড়ায় বসিয়ে দেব, মিলনের সন্ধ্যেবেলায় তাতে জ্বলবে লাল আলো, আর বিচ্ছেদের রাতে নীল।...অনাহূত তোমার বাড়িতে কোনো মতেই যেতে পাব না।... তোমার নিমন্ত্রণ মাসে এক দিন পূর্ণিমার রাতে।...পূজোর সময় অন্তত দু মাসের জন্যে দু জনে বেড়াতে বেরোব। কিন্তু দু জনে দু জায়গায়। তুমি যদি যাও পর্বতে আমি যাব সমুদ্রে। এই তো আমার দাম্পত্যের স্বৈরাজ্যের নিয়মাবলি তোমার কাছে দাখিল করা গেল। তোমার কি মত? লাবণ্য উত্তর দিচ্ছে—মেনে নিতে রাজী আছি।...আমি জানি আমার মধ্যে এমন কিছুই নেই যা তোমার দৃষ্টিকে বিনা লজ্জায় সইতে পারবে, সেই জন্যে দাম্পত্যে দুই পারে দুই মহল করে দেওয়া আমার পক্ষে নিরাপদ।...তার পর লাবণ্য প্রশ্ন করছে—কিন্তু তোমার নববধূ কি চিরদিনই নববধূ থাকবে? টেবিলে প্রবল চাপড় দিতে দিতে উচ্চৈঃস্বরে অমিত বললে, থাকবে থাকবে থাকবে।

 আমি বললুম, অমিত রায় হচ্ছে একটি কথার তুবড়ি। রবীন্দ্রনাথ পরিহাস করে তাকে দিয়ে যা বলিয়েছেন আপনি তা সত্য মনে করছেন কেন?

 অক্রূরবাবু টেবিলে কিল মেরে বললেন, মোটেই পরিহাস নয়, একবারে খাঁটী সত্য। তিনি সর্বদর্শী কবি ছিলেন, দাম্পত্যের যা পরাকাষ্ঠা সেই তিন নম্বরেরই ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। তার ভাবার্থ হচ্ছে—স্বামী-স্ত্রী আলাদা আলাদা বাড়িতে বাস করবে, কালেভদ্রে দেখা করবে, তবেই তাদের প্রীতি স্থায়ী হবে, নববধূ চিরদিন নববধূ থাকবে।

 —আপনি এ রকম দাম্পত্যের চেষ্টা করেছিলেন?