পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বদন চৌধুরীর শোকসভা
১০৯

যমদূত নিজের নিজের বন্দীর কাঁধে হাত দিয়ে রইল। সভার কোনও লোক এই চার জনের অস্তিত্ব টের পেলে না।

 প্রথমেই শ্রীযুক্তা ভূপালী বসুর পরিচালনায় সংগীত হল।— আজি স্মরণ করি পুণ্য চরিত বদনচন্দ্র চৌধুরীর, সেই স্বর্গগত রাজর্ষির; লোকমান্য অগ্রগণ্য কর্মযোগী ধর্মবীর। ..ইত্যাদি। গান থামলে বাঁশি আর মাদলের করুণ সংগত সহযোগে কুমারী লুলু চ্যাটার্জি একটি সময়োচিত শোকনৃত্য নাচলেন। তার পর সভাপতির আজ্ঞাক্রমে অধ্যাপক আঙ্গিরস গাঙ্গুলী মৃত মহাত্মার কীর্তিকথা সবিস্তারে বলতে লাগলেন।—

 আজ যাঁর স্মৃতিতর্পণের জন্য আমরা এখানে এসেছি তিনি আমাদের শোকসাগরে নিমজ্জিত করে দিব্যধামে গেছেন, কিন্তু আমি স্পষ্ট অনুভব করছি যে তাঁর আত্মা এই সভায় উপস্থিত থেকে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি গ্রহণ করছেন। স্বর্গত বদনচন্দ্র চৌধুরী আকারে চরিত্রে কর্মে ধর্মে এক লোকোত্তব মহীয়ান পুরুষ ছিলেন। তাঁর এই তৈলচিত্রের দিকে চেয়ে দেখুন, কি বিরাট সৌম্য মূর্তি! নিবিড় শ্যামবর্ণ শালপ্রাংশু বিশাল বপু, পদ্মপলাশ নেত্র, আবক্ষলম্বিত শ্মশ্রু। তিনি একাধারে কর্মযোগী ধর্মযোগী আর জ্ঞানযোগী ছিলেন, যেমন উপার্জন করেছেন তেমনি বহুবিধ সৎকার্যে ব্যয়ও করেছেন। এক কথায় তিনি যে একজন খাঁটী রাজর্ষি ছিলেন তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আশা করি তাঁর উপযুক্ত পুত্রগণ তাঁদের পুণ্যশ্লোক পিতৃদেবের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন। এই রকম বিস্তর কথা আঙ্গিরসবাবু এক ঘণ্টা ধরে শোনালেন।

 ঘনশ্যাম জনান্তিকে বললেন, আহা, কানে যেন মধু ঢেলে দিলে, নয় হে বদন?

 তার পর একজন তরুণ কবি একটি গদ্য কবিতা পাঠ করলেন।