পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধুস্তুরী মায়া

 —অবাক করলে তুমি। বাড়ীতে সতীলক্ষী গৃহিণী আছেন তব, বলছ প্রেম হয় নি! শাস্ত্রে বলে—জীর্ণমন্নং প্রশংসন্তি ভার্যাঞ্চ গতযৌবনাম্। অর্থাৎ ভাত হজম হলে আর স্ত্রী বৃদ্ধা হলেই লোকে প্রশংসা করে। এখন না হয় দুজনে বুড়ো হয়েছ, কিন্তু প্রথম বয়সে প্রেম হয় নি এ কি রকম কথা?

 —আমার বয়স যখন বারো তখনই বাবা সাত বছরের পত্রবধু ঘরে আনলেন। খিদে না হতেই যদি খাবার জোটে তবে ভোজনের সুখ হবে কেমন করে? তা ছাড়া গিন্নীর মেজাজটি চিরকালই র‍ুক্ষু, প্রেম করবার মানুষ তিনি নন। আর চেহারাটি তো তোমার দেখাই আছে। তবে হক কথা বলব, মাগী রাঁধে যেন অমৃত।

 —কি রকম হলে তুমি খুশী হতে বল তো?

 —যা হবার নয় তা বলে আর লাভ কি। তবু মনের কথা বলছি শোন। হ‍ুইল দেওয়া ছিপে যেমন করে রুই কাতলা ধরা হয় সেই রকম আর কি। ফাতনা নড়ে উঠল, টোপ গিলেই চোঁ করে সরে গেল, তার পর টান মেরে কাছে আনলুম, আবার তো ছাড়লুম, এই রকম খেলিয়ে খেলিয়ে বউ ঘরে তুলতে পারলেই জীবনটা সার্থক হত।

 —ও, তুমি নটবর নাগর হয়ে প্রেমের মৃগয়া করতে চাও! এ বয়সে ওসব চিন্তা ভাল নয় ভাই। পত্নী যে ভাবেই ঘরে আসুন—কচি বেলায় বা ধেড়ে বয়সে, প্রেমের আগে বা পরে তিনি চিরকালই মার্গিতব্যা, অর্থাৎ খোঁজবার আর চাইবার জিনিস।

 —কি বললে, মার্গিতব্যা? তা থেকেই বুঝি মাগী হয়েছে?

 —তা জানি না, সুনীতি চাটুজ্যে মশাই বলতে পারেন।

 উদ্ভব পাল একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ভড়াক ভড়াক করে তামাক টানতে লাগলেন।