পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
ধুস্তুরী মায়া

মোড়কে দশটা গিনি রয়েছে। বুঝলুম বিঘোর বাবার দান তাঁর অলৌকিক শক্তিতে আমার পকেটে চলে এসেছে। তার পর থেকে মাঝে মাঝে তাঁর কাছে যেতুম, নানা রকম আশ্চর্য তত্ত্বকথা শুনতুম। বছর খানিক পরে তিনি কালীঘাট থেকে চলে গেলেন, তাঁর একজন বড়লোক ভক্ত ত্রিবেণীর কাছে গঙ্গার ধারে একটি আশ্রম বানিয়ে দিয়েছিলেন, সেখানেই গিয়ে রইলেন। একাই থাকতেন, তবে ভক্তরা মাঝে মাঝে তাঁকে দেখতে যেত।

 তার পর দু বৎসর তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয় নি, খবরও কিছ পাই নি। একদিন বেলা বারটায় বাড়ি ফিরে এসেছি, একটা হার্নিয়া, দুটো অ্যাপেনডিক্স, তিনটে টিউমার, চারটে টনসিল, আর গোটা পাঁচেক হাইড্রোসিল অপারেশন করে অত্যন্ত ক্লান্ত বোধ করছি। নাওয়া খাওয়ার পর স্ত্রীকে বললুম, আমি বিকেল চারটে পর্যন্ত ঘুমুব, খবরদার কেউ যেন না ডাকে। কিন্তু ঘুমাবার জো কি। ঘণ্টা খানিক পরেই ঠেলা দিয়ে গিন্নী বললেন, ওগো শুনছ, জরুরী তার এসেছে। বললুম, ছিঁড়ে ফেলে দাও। গিন্নী বললেন, এ যে বিঘোর বাবার তার। অগত্যা টেলিগ্রামটা পড়তে হল, লিখেছেন—এখনই চলে এস, মোস্ট আর্জেণ্ট কেস।

 তখনই মোটরে রওনা হলুম। ব্যাগটা সঙ্গে নিলুম, তাতে শুধু মামুলী সরঞ্জাম ছিল, কি রকম কেস কিছুই জানা নেই সেজন্য বিশেষ কোনও ওষুধপত্র নিতে পারলুম না। শীতকাল, পৌঁছুতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বিঘোর বাবার আশ্রমটি ত্রিবেণীর কাছে কাগমারি গ্রামে গঙ্গার ধারে। খুব নির্জন স্থান, কাছাকাছি লোকালয় নেই। গাড়ি থেকে নেমে আশ্রমের আগড় ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই বিঘোর বাবার সঙ্গে দেখা। পরনে লাল চেলির জোড়, কপালে রক্তচন্দনের ফোঁটা, পায়ে খড়ম, হুঁকো হাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাক খাচ্ছেন।