পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
ধুস্তুরী মায়া

খুব মত ছিল, কিন্তু ওর বাবা কিছুতেই রাজী হলেন না। মস্ত বড় অফিসার হলে কি হবে, জন্ম যে অজ পাড়া গাঁয়ে।

 মানিক তার ভাবী ভগিনীপতিকে প্রশ্নে প্রশ্নে অস্থির করতে লাগল।—আপনার এই ঘড়িটায় দম দিতে হয় না বুঝি? এই ফাউণ্টেন পেনটার দাম কত? মোটর গাড়িতে রেডিও বসান নি কেন? আপনার সিগারেট কেসটা দেখান না, বিলাতে কিনেছেন বুঝি? আপনার ক্যামেরা আছে? আমাদের ছবি তুলে দেবেন? ইত্যাদি।

 খগেনকে রটাইএর খুব পছন্দ হল। সে তিন-চার বার আলাপের চেষ্টা করলে, কিন্তু তার মুখ থেকে কথা বেরুতে না বেরুতে রুবি আর তার মা কটমট করে তার দিকে তাকালেন, অগত্যা সে চুপ করে খাবারের অপেক্ষায় বসে রইল। আজ রটাইকে নিমন্ত্রণ করতে রুবিব মায়ের মোটেই ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু সে খাবার বয়ে আনবে, তাদের বাড়িতে চাকরের অভাব, সেজন্য নেহাত চক্ষুলজ্জার খাতিরে তাকে খেতে বলা হয়েছে।

 অবশেষে খাবার এল। বাড়ির চাকর একটা ময়লা হাফপ্যাণ্টের ওপর ফরসা হাত কাটা শার্ট পরে খাবার আর চায়ের ট্রে একে একে নিয়ে এল। সে মেদিনীপুরের লোক, কিন্তু রুবির মা তাকে ‘বোই’ সম্বোধন করে হিন্দীতে ফরমাশ করতে লাগলেন। রুবি পরিবেশন করলে। রটাই সব অনাদর ভুলে গিয়ে নিবিষ্ট হয়ে খেতে লাগল।

 রুবির মা বললেন, কই, কিছুই তো খাচ্ছ না বাবা খগেন, আরও দুটো কচুরি আর প্যাটি দিই। বল্ না রে রুবি ভাল করে খেতে, এত খেটে সব তৈরি করলি, না খেলে মেহনত সার্থক হবে কেন। সব জিনিস কেমন হয়েছে বাবা?