দিন কতক পরে রটাই জিজ্ঞাসা করলে, ভাব হল?
খগেন বললে, ধীরে রটন্তীকুমার, ধীরে। পণ্ডিতরা বলেন, পথ হাঁটা, কাঁথা সেলাই, আর পাহাড় টপকানো শনৈঃ শনৈঃ মানে আস্তে আস্তে করতে হয়। ভাব করাও সেই রকম, তাড়া হুড়ো চলে না। বাবা যদি আমাকে ত্যাজ্যপুত্তর করতেন তবে এত দিন কোন্ কালে ভাব হয়ে যেত। তা তো তিনি করবেন না, আবার তাঁর টাকাও বিস্তর আছে, সব আমিই পাব। এই হয়েছে বিপদ।
—বিপদ কেন? টাকা থাকা তো ভালই, কত রকম মজা করা যায়, আইসক্রীম, চকোলেট, মোটর গাড়ি, দম দেওয়া ইঞ্জিন, ব্যাডমিণ্টন, পিংপং, লুডো, আরও কত কি।
—তোমার দিদি যে তা বোঝেন না। তাঁর বিশ্বাস, সমান সমান না হলে ভাব করা ঠিক নয়। আমি তাঁকে বলি, তুমিই বা কিসে কম? দেখতে আমার চাইতে ঢের ভাল, বিদ্যেতেও বেশী। তোমার দাদামশাই তো বলেই দিয়েছেন তুমি হচ্ছ লক্ষী সরস্বতী আর অন্নপূর্ণার অ্যাভারেজ। তুমি চমৎকার গাইতে পার, আমার গলা টিপলেও সারেগামা বেরুবে না। তুমি হরেক রকম খাবার করতে জান, মায় ল্যাংড়া আমের ল্যাংচা, আর আমি পাঁউরাটি কাটতেও জানি না। তবু তোমার দিদিমণি খুঁতখুঁত করছেন। যা হক, তুমি ভেবো না রটাই, সব ঠিক হয়ে যাবে, দিন কতক সবুর কর।
পাঁচ দিন পরে রটাই আবার প্রশ্ন করলে, ভাব হল?
খগেন বললে, আর একটু দেরি আছে।
রটাই বিরক্ত হয়ে বললে, এত দিনেও ভাব হল না? আমার সঙ্গে তো আপনার এক মিনিটে ভাব হয়েছিল। বড়দির ভারী অন্যায়, আপনি তাকে বলুন, তিন দিনের মধ্যে যদি ভাব না করে তবে আড়ি হয়ে যাবে।