পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অগস্ত্যদ্বার
১৪৯

এই গিরিসংকটের একটু উত্তরে সরিয়ে রাখ। আমি সসৈন্যে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যাই, তার পর তুমি তোমার সেনা নিয়ে অভীষ্ট স্থানে যাত্রা ক’রো।

 কনকবর্মা মাথা নেড়ে বললেন, তা হতেই পারে না, আমি তোমার চাইতে বয়সে বড়, আমার অশ্ব-রথ-গজাদিও বেশী, অতএব পথের অগ্রাধিকার আমারই। তুমিই একটু দক্ষিণে হটে গিয়ে আমাকে পথ ছেড়ে দাও।

 বিশাখসেন বললেন, অন্যায় বলছ সখা। তুমি বয়সে একটু বড় হতে পার, তোমার অশ্ব-গজাদিও প্রচুর থাকতে পারে, কিন্তু আমার বিদর্ভ রাজ্য অতি সমৃদ্ধ ও বিশাল, তার মধ্যে চারটে কলিঞ্জরের স্থান হয়। অতএব তুমিই আমাকে পথ দাও।

 অনেক ক্ষণ এই রকম তর্ক বিতর্ক চলল। তার পর কনকবর্মা বললেন, ওহে বিশাখসেন, তোমার বড়ই স্পর্ধা হয়েছে। এই শরাসন স্পর্শ করে শপথ করছি, কিছুতেই তোমাকে আগে যেতে দেব না, তোমার পূর্বেই আমি দক্ষিণে অগ্রসর হব। যখন মিষ্টবাক্যে বিবাদের মীমাংসা হল না তখন যুদ্ধই করা যাক। এই বলে তিনি তাঁর ধনুতে শরসন্ধান করলেন।

 বিশাখসেন বললেন, ওহে কনকবর্মা, আমিও শপথ করছি, বাহুবলে আমার পথ করে নেব, তোমার পূর্বেই আমি উত্তর দিকে যাত্রা করব। এই বলে তিনি ধনুতে শরযোজনা করে জ্যাকর্ষণ করলেন।

 তখন দুই রাজবয়স্য কহোড়ভট্ট আর বিড়ঙ্গদেব একযোগে হাত তুলে উচ্চ কণ্ঠে বললেন, ভো নৃপতিযুগল, থামুন থামুন। মনে নেই, গত বৎসর মকরসংক্রান্তির দিনে আপনারা নর্মদায় স্নানের পর অগ্নিসাক্ষী করে মৈত্রীবন্ধন করেছিলেন? অপি চ, তখন উষ্ণীষ বিনিময় করে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে কিছুতেই আপনাদের সৌহার্দ্য ক্ষুণ্ণ হতে দেবেন না।