পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠীর কৃপা
১৬১

স্ত্রী পুত্র কন্যার সঙ্গে সম্বন্ধ রাখা চলবে না, নতুন সংসার পাতবেন। তার কোনও বাধা হল না, অত্যন্ত গরিবের মেয়ে অনাথা সুকুমারী তাঁর ঘরে এল। প্রথম পক্ষের স্ত্রী কাত্যায়নী তিন ছেলে নিয়ে কলকাতায় তাঁর ভাইএর বাড়িতে গিয়ে রইলেন। স্বামীর কাছ থেকে কিছু মাসহারা পান, তা ছাড়া কোনও সম্বন্ধ নেই। দুই মেয়ের বিয়ে আগেই হয়ে গিয়েছিল, তারা শ্বশুরবাড়িতে থাকে।

 স্বামীর প্রবোধবাক্য শুনে সুকুমারী বললে, মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে আমাকে ভুলিও না। কাগজে পড়েছি জন্মনিয়ন্ত্রণের উপায় বেরিয়েছে, দিল্লির মন্ত্রীরাও তা ভাল মনে করেন। তুমি এত খবর রাখ, এটা জান না? কলকাতায় গিয়ে মন্ত্রীদের কাছ থেকে শিখে এস।

 গোকুলবাবু বললেন, তারা ছাই জানে।

 —তবে বড় মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা ক’রো, তিনি তো শুনেছি ডাক্তার।

 —পাগল হয়েছ নাকি সকু? ছি ছি ছি, নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ বংশের কুলবধূর মুখে এই কথা! অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী, একটুখানি লেখাপড়া শিখে খবরের কাগজ পড়ে এইসব পাপচিন্তা তোমার মাথায় ঢুকেছে। কৃত্রিম উপায়ে জন্মরোধ করা একটা মহাপাপ তা জান? প্রজাবৃদ্ধির জন্যই ভগবান স্ত্রী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। ভগবানের এই গর্ভধারণ হচ্ছে স্ত্রীজাতির বিধিনির্দিষ্ট কর্তব্য। ভগবানের এই বিধানের ওপর হাত চালাতে চাও?

 —শুনেছি আজকাল ঘরে ঘরে চলছে, তাই প্রাণের দায়ে বলছি। আমি মুখ্‌খু মানুষ, কিছুই জানি না, ন্যায়-অন্যায় ও বুঝি না, কিন্তু ভগবানের ওপর হাত না চালায় কে? ভগবান লেংটা করে পাঠিয়েছিলেন, কাপড় পরছ কেন? দাড়ি কামাও কেন? দাঁত বাঁধিয়েছ কেন?