—রাধামাধব! এসব কথা মুখে এনো না সুকু, জিব খসে যাবে।
—দিল্লির মন্ত্রীদের তো খসে না।
—খসবে, খসবে, পাপের মাত্রা পূর্ণ হলেই খসবে। শাস্ত্রে যে ব্যবস্থা আছে তা পালন করলে ভগবানের বিধান লঙ্ঘন করা হয় না, তার বাইরে গেলেই মহাপাপ। এইটে জেনে রেখো যে ভাগ্যের হাত থেকে কারও নিস্তার নেই। তোমার সন্তানভাগ্য মন্দ ছিল তাই এত দিন দুঃখ পেয়েছ, ভাগ্য পালটালেই তুমি সুখী হবে। যা বিধিলিপি তা মাথা পেতে মেনে নিতে হয়। এসব বড় গূঢ় কথা, একদিন তোমাকে বুঝিয়ে দেব।
সকুমারী হতাশ হয়ে চুপ করে রইল।
ছ মাস যেতে না যেতে সুকুমারী আবার অন্তঃসত্ত্বা হল এবং সঙ্গে সঙ্গে রোগে পড়ল। ডাক্তার জানালেন, অতি বিশ্রী অ্যানিমিয়া, তার ওপর নানা উপসর্গ; কলকাতায় নিয়ে গিয়ে যদি ভাল চিকিৎসা করানো হয় তবে বাঁচলেও বাঁচতে পারে। ডাক্তারের কথা উড়িয়ে দিয়ে গোকুলবাবু বললেন, তুমি কিচ্ছু ভেবো না সুকু, জ্যোতিঃশাস্ত্রী মশায়ের মাদুলিটি ধারণ করে থাক আর বিধু ডাক্তারের গ্লোবিউল খেয়ে যাও, দু দিনে সেরে উঠবে।
পূজোর আগে গোকুলবাবু সকুমারীকে বললেন, অনেক কাল বাইরে যাই নি, শরীরটা বড় বেজুত হয়ে পড়েছে। পূজোর বন্ধের সঙ্গে আরও সাত দিন ছুটি নিয়েছি, মোক্তার নরেশবাবুরা দল বেধে রামেশ্বর পর্যন্ত যাচ্ছেন, আমিও তাঁদের সঙ্গে ঘুরে আসব। তুমি ভেবো না, ঠিকে ঝি রইল, ছোঁড়া চাকর গুপে রইল, গয়লাবউও রোজ দু বেলা তোমাকে দেখে যাবে। আমি কালীপুজোর কাছাকাছি ফিরে আসব।