পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
ধুস্তুরী মায়া

ভার নিয়েছ তখন পাকা করেই নাও, গিন্নী হয়ে ঘর আলো করে থাক।

 মেনী বললে, ইশ, আপনার যে সবুর সইছে না দেখছি। ব্যস্ত হচ্ছেন কেন, লোকে বলবে কি? দিদির জন্যে শোকটা একটু কমুক, অশৌচ শেষ হক, শ্রাদ্ধ-শান্তি চুকে যাক, তার পর ও কথা বলবেন।

 শ্রাদ্ধ চুকে গেল, কিন্তু গোকুলবাবুর স্বস্তি নেই, মেনকার রকম সকম বড় সন্দেহজনক ঠেকছে। চুপ করে থাকতে না পেরে তিনি বললেন, হ্যাঁগা মেনকা, তোমার স্বভাব-চরিত্র তো ভাল মনে হচ্ছে না। আইবুড়ো মেয়ে, বলি তোমার দুধ আসে কি কবে? আমি দেখেছি তুমি খোকাকে খাওয়াও। ছেলেপিলে হয়েছে নাকি? পষ্ট করে বল বাপু, যতই সুন্দরী হও, নষ্ট মেয়ে আমি বিয়ে করতে পারব না।

 মেনী হেসে বললে, ও, লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা হয়েছে বুঝি! ভয় নেই গোসাঁই ঠাকুর, আমার চরিত্রে এতটুকু খুঁত পাবে না, আমি একবারে খাঁটী, যাকে বলে অপাপবিদ্ধা। অত শাস্ত্র পড়েছ পয়স্বিনী কন্যার কথা জান না? আমি হচ্ছি তাই। মাঝে মাঝে দুধ আসে, তিন-চার মাস থাকে, আবার দিনকতক বন্ধ হয়। তোমার ভাগ্য ভাল যে এ রকম একটা মেয়ে তোমার ঘরে এসেছে, তাই তোমার আধ-মরা ছেলেটা বেঁচে গেল, নিজের মায়ের দুধ তো ভাল করে খেতেই পায় নি।

 গোকুলবাবুর মনের খুঁতখুঁতনি দূর হল না। কিন্তু মেনকার রূপ তাঁকে জাদু করেছে। ভাবলেন, স্ত্রী রত্নং দুষ্কলাদপি, যা থাকে কপালে, মেনকাকে ছাড়তে পারব না। দু মাস যেতে না যেতেই বিয়ে হয়ে গেল।