পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গন্ধমাদন-বৈঠক
১৭৫

করেছি। মহর্ষি ব্যাসের রসনাগ্রে সমস্ত প্রাণ আর ইতিহাস অবস্থান করছে। দৈত্যরাজ বলি ইন্দকে পরাস্ত করেছিলেন, অসংখ্য সৈন্য পরিচালনার অভিজ্ঞতা এঁর আছে। কৃপাচার্য কুরুক্ষেত্রসমরে অশেষ পরাক্রম দেখিয়েছেন কিন্তু কদাচ ধর্মবিরুদ্ধ কর্ম করেন নি। বিভীষণ আর অশ্বত্থামা দুজনেই মহারথ, অধিকন্তু সমস্ত পৃথিবীর সংবাদ রাখেন। পবননন্দন হনুমান বাহুবলে চরিত্রগুণে এবং প্রভুভক্তিতে অদ্বিতীয়। আর, আমার কীর্তির তো তোমরা সকলেই জান, নিজের মুখে আর বলতে চাই না। এখন আমাদের কর্তব্য, সাত জনে মন্ত্রণা করে এই দারুভ কলিযুগের উপযুক্ত ধর্মযদ্ধের নিয়ম বেঁধে দেওয়া।

 দৈত্যরাজ বলি বললেন, আপনারা কিছু মনে করবেন না, আমি কি অপ্রিয় সত্য নিবেদন করছি। এক ব্যাসদেব ছাড়া আমরা সকলেই এক কালে অসংখ্য বিপক্ষ বধ করেছি। আমরা কেউ ধর্মযুদ্ধ করি নি, অপরাধীর সঙ্গে বিস্তর নিরপরাধ লোককেও বিনষ্ট করেছি। ধর্মযুদ্ধের আমরা কি জানি? ব্যাসদেবও কুরঃপাণ্ডবের যুদ্ধ নিবাবণ করতে পারেন নি। আসল কথা, ধর্মযুদ্ধ হতেই পারে না, যুদ্ধ মাত্রেই পাপযুদ্ধ। যে বীর যত শত্রু মারেন তিনি তত পাপী।

 পরশুরাম প্রশ্ন করলেন, তুমি কি বলতে চাও আমরা সকলেই পাপী?

 —আজ্ঞে হাঁ, ব্যাসদেক ছাড়া। আমাদের মধ্যে শ্রীহনুমান সব চেয়ে কম পাপী, কারণ উনি শুধু হাত পা আর দাঁত দিয়ে লড়েছেন, বড় জোর গাছ আর পাথর ছুড়েছেন। উনি ধনুর্বিদ্যা জানতেন না, দূর থেকে বহু প্রাণী বধ করা ওঁর পক্ষে অসম্ভব ছিল!

 হনুমান বুক ফুলিয়ে বললেন, দৈত্যরাজ, তুমি কিছুই জান না।