পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রামধনের বৈরাগ্য
২৭

 রামধন হ‍ুঁশিয়ার কর্মবীর, আগাগোড়া না ভেবে কোনও কাজে হাত দেন না। তিনি প্রথমেই মনে মনে পর্যালোচনা করলেন —বাংলা কথাসাহিত্যের আরম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত কি রকম পরিবর্তন হয়েছে। সেকালের লেখকদের হাত পা বাঁধা ছিল, প্রণয়ব্যাপার দেখাতে হলে প্রাচীন হিন্দুযুগে অথবা মোগল-রাজপুতের আমলে যেতে হত, নইলে নায়িকা জুটত না। তার পরের লেখকরা নোলকপরা বালিকা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করলেন, কিন্তু জুত করতে পারলেন না। দুর্গেশনন্দিনীর তিলোত্তমা নেহাত বাচ্চা, তবু বঙ্কিমচন্দ্র তাকে সসম্মানে ‘তিনি’ বলেছেন। রবীন্দ্রনাথ নাবালিকা সাবালিকা কোনও নায়িকাকেই খ্যাতির করেন নি, কিন্তু তাঁর কমলা সুচেরিতা ললিতা এখনকার দৃষ্টিতে খুকী মাত্র। পরে অবশ্য তিনি বয়স বাড়িয়েছেন, যেমন শেষের কবিতার লাবণ্য, চার অধ্যায়ের এলা। বাংলা গল্পের মধ্যযুগে জোরালো প্রেম দেখাতে হলে মামুলী নায়িকায় কাজ চলত না, শালী বউদিদি বা বিধবা উপনায়িকাকে আসরে নামাতে হত। সেকেলে গল্পের নায়কদেরও বৈচিত্র্য ছিল না, হয় প্রতাপের মতন যোদ্ধা, না হয় গোবিন্দলালের মতন ধনিসন্তান। দামোদর মুখুজ্যে ও তৎকালীন লেখকদের নায়করা প্রায় জমিদারপুত্র, তারা ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে যেত, গরিব প্রজাদের হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিত, এবং যথাকালে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে খুশী করে রায়বাহাদুর খেতাব পেত। তার পর ক্রমে ক্রমে বাঙালী সমাজের প্লটপরিবর্তন হল, সঙ্গে সঙ্গে গল্পেরও প্লটপরিবর্তন হল, বোমা স্বদেশী আর অসহযোগের সংযোগে মেয়ে-পুর‍ুষের কাজের গণ্ডি বেড়ে গেল, মেলা-মেশা সহজ হল। অবশেষে এল কিষান-মজদুরের আহ্বান, কমরেডী কর্মক্ষেত্র, জাপানী আতঙ্ক, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, নরহত্যা, দেশ-জবাই, স্বাধীনতা, বাস্তুত্যাগ, নারীহরণ, মহাকলিযুগ,