পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
ধুস্তুরী মায়া

লোকলজ্জার লোপ, অবাধ দুষ্কর্ম। মানুষের দুর্দশা যতই বাড়ুক, গল্প লেখা যে খুব সুসাধ্য হয়ে গেল তাতে সন্দেহ নেই। এখনকার নায়ক কবি দোকানদার সৈনিক নাবিক বৈমানিক চোর ডাকাত দেশসেবক সবই হতে পারে। নায়িকাও নার্স টাইপিস্ট টেলিফোনবালা সিনেমাদেবী মজদুরনেত্রী সম্পাদিকা অধ্যাপিকা যা খুশি হতে পারে। সংস্কৃত কবিরা যাকে ‘সংকেত’ বলতেন, অর্থাৎ ট্রিস্ট, তারও বাধা নেই, রেস্তোরাঁ আছে, পার্ক আছে, লেক আছে, সিনেমা আছে। ভারতীয় কথাসাহিত্যের স্বর্ণযুগ উপস্থিত হয়েছে, সমাজ আর পরিবেশ বদলে গেছে, অতএব রামধন একটু চেষ্টা করলেই শ্রেষ্ঠ পাশ্চাত্ত্য গল্পকারদের সমকক্ষ হতে পারবেন।

 আধুনিক বাঙালী লেখকরা বুঝেছেন যে সেক্স অ্যাপীলই হচ্ছে উৎকৃষ্ট গল্পের প্রাণ। এই জিনিসটি আসলে আমাদের সনাতন আদিরস। কিন্তু তার ফরমলা বড় বাঁধাধরা, বৈচিত্র্য নেই, ঝাঁজও মরে গেছে, সেজন্য আধুনিক রুচির উপযুক্ত অদলবদল করে তার নাম দেওয়া হয়েছে যৌন আবেদন। এপর্যন্ত কোনও বাঙালী সাহিত্যিক এই আবেদন পরোপারি কাজে লাগাতে পারেন নি। ফরাসী লেখক ফ্লোবেয়ার প্রায় এক শ বছর আগে ‘মাদাম বোভারি’ লিখেছিলেন, কিন্তু এদেশের কোনও গল্পকার তার অননুকরণ করেন নি। লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লি,’ হাক্সলির ‘পয়েণ্ট কাউণ্টার পয়েণ্ট’ প্রভৃতির নকল করতে কারও সাহস হয় নি। রবীন্দ্রনাথের কোনও নায়িকা 'প্রেমের বীর্যে যশস্বিনী’ হতে পারে নি। চার‍ু কমলা বিমলা আর বিনোদ বোঠানকে তিনি রসাতলের মুখে এনেও রাস টেনে সামলে রেখেছেন। আর শরৎ চাটুজ্যেই বা কি করেছেন? গুটিকতক ভ্রষ্টাকে সংশীলা বানিয়েছেন। দুর্দান্ত লম্পট জীবানন্দকে পোষ মানিয়েছেন, অথচ কোনও লম্পটাকে গৃহলক্ষী