পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রামধনের বৈরাগ্য
৩১

রচনা করেন। কিন্তু গল্পজগতে ভগবানের হাত নেই, রামধন নিজেই তাঁর পাত্র-পাত্রীর স্রষ্টা আর ভাগ্যবিধাতা। তিনি প্রচলিত সামাজিক আদর্শ মানবেন না, যেমন খুশি চরিত্র রচনা করবেন।

 মা বাপ একসঙ্গে অনেক সন্তানকে ভালবাসে, তাতে দোষ হয় না। নারী যদি এককালে একাধিক পুরুষে আসক্ত হয় তাতেই বা দোষ হবে কেন? এখনকার প্রগতিবাদী লেখকদের তুলনায় ব্যাসদেব ঢের বেশী উদার ছিলেন। তিনি দ্রৌপদীকে একসঙ্গে পাঁচটি পতি দিয়েছেন, যযাতির কন্যা মাধবীর এক পতি থাকতেই অন্য পতির সঙ্গে পর পর চার বার বিবাহ দিয়েছেন। নিজের জননী মৎস্যগন্ধাকেও তিনি ছেড়ে দেন নি, তাঁকে শান্তনু-মহিষী বানিয়েছেন। ব্যাস বেপরোয়া বাহাদুর লেখক, কিন্তু রামধন তাঁকেও হারিয়ে দেবেন। দ্রৌপদী স্বেচ্ছায় পঞ্চপতি বরণ করেন নি, গ‍ুর‍ুজনের ব্যবস্থা মেনে নিয়েছিলেন। মাধবী আর মৎস্যগন্ধাও নিজের মতে চলেন নি। স্ত্রীজাতির স্বাতন্ত্র্য কাকে বলে রামধন দাস তা এবারে দেখিয়ে দেবেন।


রামধন যে নতুন গল্পটি আরম্ভ করলেন তা খুব সংক্ষেপে বলছি। রাধাকৃষ্ণের লীলাস্থান যেমন বৃন্দাবন, সিনেমার তারক-তারকার গগন যেমন টালিগঞ্জ, অভিজাত নায়ক-নায়িকার বিলাসক্ষেত্র তেমনি বালিগঞ্জ। আনাড়ী পাঠক—বিশেষত প্রবাসী আর পাড়াগেঁয়ে পাঠক—মনে করে বালিগঞ্জ হচ্ছে অলকাপুরী, যক্ষ গন্ধর্ব কিন্নর অপ্সরার দেশ। সেখানে মশা আছে, মাছি আছে, পচা ড্রেন আছে, দারিদ্র্যও আছে, কিন্তু তার খবর কে রাখে। সেই কল্পলোক বালিগঞ্জেই রামধন তাঁর গল্পের ভিত্তিস্থাপন করলেন।