পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভরতের ঝুমঝুমি
৪১

কিন্তু অকৃত্রিম, গোঁফ আর গালের ওপর দিকের দাড়ি ছেঁড়া ছেঁড়া, যেন ছাগলে খেয়েছে। কিন্তু থুতনির দাড়ি বেশ ঘন আর লম্বা, নীচের দিকে ঝুঁটির মতন একটি বড় গেরো বাঁধা। দেখলে মনে হয় এই গেরোটি কোনও কালে খোলা হয় না। পরনের গেরুয়া কাপড় আর কাঁধের কম্বল অত্যন্ত ময়লা। সর্বাঙ্গে ধূলো, গলায় তেলচিটে পইতে, হাতে একটা ঝুলি আর তোবড়া ঘটি। রুদ্রাক্ষের মালা, ভস্মের প্রলেপ, গাঁজার কলকে, চিমটে, কমণ্ডলু প্রভৃতি মামুলী সাধুসজ্জা কিছুই নেই।

 প্রশ্ন করলুম, ক্যা মাংতা বাবাজী? বাবাজী উত্তর দিলেন না, সোজা ঘরে ঢুকে আমার খাটিয়ায় বসে পড়লেন। টহলরাম বাঙালীর সংসর্গে থেকে একটু নাস্তিক হয়ে পড়েছে, অচেনা সাধুবাবাদের ওপর তেমন ভক্তি নেই। রুখে উঠে বললে, আরে কৈসা বেহুদা আদমী তুম, উঠো খাটিয়াসে!

 সাধুবাবা ভ্রুকুটি করে রাষ্ট্রভাষায় যে গালাগালি দিলেন তা অশ্রাব্য অবাচ্য অলেখ্য। পুলিন অত্যন্ত রেগে গিয়ে গলাধাক্কা দিতে গেল। আমি তাকে জোর করে থামিয়ে বললুম, কর কি, বাবাজীর সঙ্গে একটু আলাপ করেই দেখা যাক না।

 প্রমোদ চাটুজ্যে মশাই বিস্তর সাধুসঙ্গ করেছেন। সাধুচরিত্র তাঁর ভাল রকম জানা আছে, যোগী অবধূত বামাচারী তান্ত্রিক অঘোরপন্থী প্রভৃতি হরেক রকম সাধক সম্বন্ধে তিনি গবেষণা করেছেন। তাঁর লেখা থেকে এইটুকু বুঝেছি যে গর‍ুর যেমন শিং, শজারুর যেমন কাঁটা, খট্টাশের যেমন গন্ধ, তেমনি সিদ্ধপুর‍ুষদের আত্মরক্ষার উপায় গালাগালি। তাঁদের কটুবাক্যের চোটে অনধিকারী বাজে ভক্তরা ভেগে পড়ে, শুধু নাছোড়বান্দা খাঁটী মুক্তিকামীরা রয়ে যায়। এই আগন্ত‍ুক সাধুবাবাটির মূখেখিস্তির বহর দেখে মনে হল