পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
8৬
ধুস্তুরী মায়া

 আমি আর দাঁড়ালুম না, কথাটি না বলে পালিয়ে এলুম। যে পথে এসেছিলুম সেই পথের সর্বত্র খুঁজে দেখলুম, কোথাও ঝুমঝুমি নেই। আমি অত্যন্ত ভুলো লোক, কিন্তু ঝুমঝুমিটা তো ট্যাঁকেই গোঁজা ছিল। নিশ্চয় নাইবার সময় জলে পড়ে গেছে। যেখানে যেখানে স্নান করেছিলুম সর্বত্র জলে নেমে হাতড়ে দেখলুম, কিন্তু পাওয়া গেল না। তবে বোধ হয় র‍ুই মাছেই গিলেছে, শকুন্তলার আংটির মতন। বোয়াল কালবোস চাঁই ঢাঁইও হতে পারে। জেলেদের ডেকে ডেকে বললুম, ওরে, মাছের পেটে ঝুমঝুমি পেয়েছিস? বার করে দে, আশীর্বাদ করব। ব্যাটারা বললে, মাছের পেটে ঝুমঝুমি থাকে না ঠাকুর, পটকা থাকে। এই বলে দাঁত বার করে হাসতে লাগল। আমি অভিশাপ দিলুম, তোরা দে’তো কুমির হয়ে যা। কিন্তু কোনও ফল হল না।

 ওঃ, মেনকার কথা রাখতে গিয়ে কি সংকটেই পড়েছি! ঝুমঝুমি তুচ্ছ জিনিস, কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা যে মহাপাপ। তার পর হাজার হাজার বছর কেটে গেছে, অসংখ্য বার অসংখ্য স্থানে খুঁজেছি, কিন্তু ঝুমঝুমি পাই নি। আমার আর শান্তি নেই, ব্রহ্মতেজ নেই, অভিশাপ দিলে ফলে না, আমি নির্বিষ ঢোঁড়া সাপ হয়ে গেছি। শিষ্যরা আমাকে ত্যাগ করেছে, আমি এখন ছন্নছাড়া হয়ে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

 আমি বললুম, মহামুনি, শান্ত হ’ন, আপনি শ‍ুধু, শ‍ুধু, কষ্ট পাচ্ছেন। ভরত রাজা তো করে স্বর্গলাভ করেছেন, তাঁর আর ঝুমঝুমির দরকার কি? আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে তপস্যা করুন, যোগসাধনা কর‍ুন, হরিনাম কর‍ুন। অথবা লোকশিক্ষার নিমিত্ত জীবনস্মৃতি লিখন, জটাশ্মশ্র‍ুধারী উগ্রতপা মনি-ঋষিদের সঙ্গে প্ল্যামার গার্ল অপ্সরাদের মোলাকাত বিবৃত করুন, পত্রিকাওয়ালারা তা