পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রেবতীর পতিলাভ
৫৭

তখন সেখানে গীত বাদ্য নৃত্য চলছে। লোকপিতামহ ব্রহ্মা একটি উচ্চ বেদীতে রত্নময় সিংহাসনে বিরাজ করছেন, তাঁর বামে ব্রহ্মাণী এবং চারি পাশে দক্ষ প্রচেতা সনৎকুমার অসিতদেবল প্রভৃতি মহাত্মা এবং আদিত্য রুদ্র বসু প্রভৃতি গণদেবতা বসে আছেন। দুই বিখ্যাত গন্ধর্ব কালোয়াত হাহা হূহূ অতিতান-রাগে মেঘগম্ভীর কণ্ঠে গান গাইছেন, অন্য দুই গন্ধর্ব তুম্বুরু ও ডুম্বুরু দুন্দুভি অর্থাৎ দামামা বাজাচ্ছেন। তখন মৃদঙ্গ আর বাঁয়া-তবলার সৃষ্টি হয় নি। দশজন বিদ্যাধর দশটি প্রকাণ্ড বীণায় ঝংকার দিচ্ছেন এবং উর্বশী রম্ভা মেনকা ঘৃতাচী প্রভৃতি অপ্সরার দল ঘুরে ঘুরে নৃত্য করছেন। একজন মহাকায় দানব একটি অজগরতুল্য রামশিঙা কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং মাঝে মাঝে তাতে ফুঁ দিয়ে প্রচণ্ড নিনাদে শ্রোতাদের আনন্দ বর্ধন করছে। সভাস্থ সকলে তন্ময় হয়ে সংগীতরস পান করছেন এবং ভাবের আবেশে মাথা দোলাচ্ছেন।

 ব্রহ্মার উদ্দেশে প্রণাম করে নারদ নিঃশব্দে সনৎকুমারের কাছে গিয়ে বসলেন। একজন বেত্রধারিণী প্রতিহারী যক্ষী ঠোঁটে আঙুল দিয়ে রৈবত ও রেবতীর কাছে এল এবং ইঙ্গিত করে ডেকে নিয়ে তাঁদের সুখাসনে বসিয়ে দিলে।

 একটু পরেই আব্রহ্ম-দেব-গন্ধর্ব-মানব প্রভৃতি সভাস্থ সকলে সবেগে মাথা আর হাত নেড়ে বলে উঠলেন—হা-হা-হাঃ! সাধু সাধু, অতি উত্তম! নৃত্যগীতবাদ্য নিবৃত্ত হল। ব্রহ্মা তখন রৈবত ও রেবতীর প্রতি প্রসন্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিকটে আসবার জন্য সংকেত করলেন।

 পিতা-পুত্রী সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলে ব্রহ্মা বললেন, রাজা, তোমার কন্যাটি তো দেখছি পরমা সুন্দরী, বড়ও হয়েছে, এর বিবাহ দাও নি কেন?