পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
ধুস্তুরী মায়া

একটু বেড়িয়ে আসছি। রৈবত বললেন, তা বেড়াও গে, কিন্তু ফিরতে বেশী দেরি ক’রো না যেন।

 রৈবতকের পাদবর্তী উপবনে বেড়াতে বেড়াতে রেবতী নিজের অদৃষ্টের বিষয় ভাবতে লাগলেন। তাঁর আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে শুধু পিতা আছেন, বিবাহের পর তিনিও ব্রহ্মলোকে চলে যাবেন। যিনি রেবতীর একমাত্র ভাবী অবলম্বন, সেই বলদেব কেমন লোক? ব্রহ্মা যাঁকে নির্বাচন করেছেন তিনি কুপাত্র হতে পারেন না—এ বিশ্বাস তাঁর আছে। কিন্তু নারদ যা বলেছেন সে যে বড় ভয়ানক কথা। রেবতী উনিশ হাত লম্বা, পরে আরও একটু বাড়বেন। কিন্তু তাঁর ভাবী স্বামী বলদেব যুগধর্ম অনুসারে নিশ্চয় খুব বেঁটে, বড় জোর সওয়া চার হাত, অর্থাৎ মানুষের তুলনায় যেমন বেরাল। এমন বিসদৃশ বেমানান বেয়াড়া দম্পতির কথা রেবতী কম্মিন্ কালে শোনেন নি। মাকড়সা-জাতির মধ্যে দেখা যায় বটে—স্ত্রীর তুলনায় পুরুষ অত্যন্ত ক্ষুদ্র। কিন্তু তার পরিণাম বড়ই করুণ, মিলনের পরেই স্ত্রী-মাকড়সা তার ক্ষুদ্র পতিটিকে ভক্ষণ করে ফেলে। ছি ছি, রেবতীর কপালে কি এই আছে? বরকন্যার এই বিশ্রী বৈষম্যের কথা কি সর্বজ্ঞ ব্রহ্মা আর নারদের খেয়াল হয় নি? দেবতা আর দেবর্ষি হলে কি হবে, দুজনেরই ভীমরতি ধরেছে।

 রেবতী একটি বকুল গাছে হেলান দিয়ে অনেকক্ষণ ভাবতে লাগলেন। দুঃখে তাঁর কান্না এল। হঠাৎ পিছন দিকে মৃদু মর্মর শব্দ শুনে তিনি মুখে ফিরিয়ে দেখলেন, একটি অতি ক্ষুদ্র মূর্তি হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার নূতন মেঘের ন্যায় তার কান্তি, কাঁধ পর্যন্ত ঝোলা গোছা গোছা কালো চুল সরু ফিতের মতন সোনার পটি দিয়ে ঘেরা, তার এক পাশে একটি ময়ূরের পালক বাঁকা করে গোঁজা। পরনে বাসন্তী রঙের ধুতি, গায়েও সেই রঙের