পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লক্ষ্মীর বাহন

সাত বৎসর পরে মুচুকুন্দ রায় আলিপুর জেল থেকে খালাস পেলেন। তাঁকে নিতে এলেন শুধু তাঁর শালা তারাপদবাবু; দুই ছেলের কেউ আসে নি। মুচুকুন্দ যদি বিপ্লবী বা কংগ্রেসী আসামী হতেন তবে ফটকের সামনে আজ অভিনন্দনকারীর ভিড় লেগে যেত, ফুলের মালা চন্দনের ফোঁটা জয়ধ্বনি—কিছুরই অভাব হত না। যদি তিনি জেলে যাবার আগে প্রচুর টাকা সরিয়ে রাখতে পারতেন, উকিল ব্যারিস্টার যদি তাঁকে চুষে না ফেলত, তা হলে অন্তত আত্মীয় বন্ধুরা অনেকে আসতেন। কিন্তু নিঃস্ব অরাজনীতিক জেল-ফেরত লোককে কেউ দেখতে চায় না। ভালই হল, মচুকুন্দবাবু মুখ দেখাবার লজ্জা থেকে বেচে গেলেন। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি বাড়ি গেলেন না; কারণ বাড়িই নেই, বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি তাঁর শালার সঙ্গে একটা ভাড়াটে গাড়িতে চড়ে সোজা হাওড়া স্টেশনে এলেন; সেখানে তাঁর স্ত্রী মাতঙ্গী দেবী অপেক্ষা করছিলেন। তার পর দুপরের ট্রেনে তাঁরা কাশী রওনা হলেন। অতঃপর স্বামী-স্ত্রী সেখানেই বাস করবেন; মাতঙ্গী দেবীর হাতে যে টাকা আছে, তাতেই কোনও রকমে চলে যাবে।

 মুচুকুন্দবাবুর এই পরিণাম কেন হল? এ দেশের অসংখ্য কৃতকর্মা চতুর লোকের যে নীতি মুচুকুন্দরও তাই ছিল। যুধিষ্ঠির বোধ হয় একেই মহাজনের পন্থা বলেছেন। এদের একটি অলিখিত ধর্মশাস্ত্র আছে; তাতে বলে, বৃহৎ কাষ্ঠে যেমন সংসর্গদোষ হয় না তেমনি বৃহৎ বা বহুজনের ব্যাপারে অনাচার করলে অধর্ম হয় না। রাম শ্যাম যদুকে ঠকানো অন্যায় হতে পারে, কিন্তু গভর্নমেণ্ট